নারী ফ্যাশনের আইকন শ্যানেল: আত্মবিশ্বাস ও প্রগতিশীলতার প্রতীক

কোকো শ্যানেল
কোকো শ্যানেল | ছবি : সংগৃহীত
0

শ্যানেল শুধুমাত্র একজন ডিজাইনারই ছিলেন না, তিনি নারীর ফ্যাশনকে আধুনিক যুগের কেন্দ্রে স্থাপন করেছেন। আত্মবিশ্বাসী ও প্রগতিশীল নারীদের জন্য একবিংশ শতাব্দীতেও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী আদর্শ। ট্যুইড জ্যাকেট, লিটল ব্ল্যাক ড্রেস থেকে শুরু করে পারফিউম পর্যন্ত, তার ফ্যাশন হাউজের প্রতিটি সৃজনশীল সৃষ্টি আজও আইকন হিসেবে ধরা হয়। সেই সময়ে যখন নারীরা সীমাবদ্ধ পোশাকের মধ্যে আবদ্ধ ছিল, শ্যানেলের ডিজাইন তাদের মার্জিত ও আভিজাত্যবোধের সঙ্গে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিয়েছিল।

খানিকটা ভিন্ন ও আকর্ষণীয় পোশাকে মধ্য ফ্রান্সের ভিশি শহরের এক ক্যাফেবারের আলো ঝলমলে মঞ্চে সুললিত কণ্ঠে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন এক তরুণী। সবার দৃষ্টি ঘুরে-ফিরে থাকতো তাঁর দিকেই। সেখান থেকেই তার নাম হয় কোকো শ্যানেল। তবে তার আসল নাম ছিল গ্যাব্রিয়েল বনইওর শ্যানেল। ১৮৮৩ সালের ১৯ আগস্ট জন্মেছিলেন ফ্রান্সের সমুর শহরে এক হতদরিদ্র কুমারী মায়ের ঘরে।

অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা কোকোর একটু মুক্তির অবকাশ মিলতো ছুটির ‍দিনগুলোতে তার খালাদের বাড়ি বেড়াতে গেলে। খালারাই তাকে পোশাক সেলাইয়ের হাতে খড়ি দেন। সেখানে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সেলাই এবং পোশাক তৈরিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯০৩ সালে একটি পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। ১৯০৭-১৯০৮ সালের দিকে, ভাগ্য ফেরাবার জন্য ভিশি শহরের কেন্দ্রে সুদৃশ্য ও বিশাল 'গ্র্যান্ড ক্যাফে'তে নিয়মিত যাওয়া আসা শুরু করেন। এই বিশাল ক্যাফেবারে আসা যাওয়া ছিল শহরের সব অভিজাত শ্রেণির মানুষদের। বিশেষ করে তরুণ সেনা অফিসারদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল গ্র্যান্ড ক্যাফে।

আরও পড়ুন:

১৯১০ সালে বয় চ্যাপেল নামে সমাজের প্রভাবশালী এক বন্ধুর সাথে মিলে প্যারিসে 'শ্যানেল মোদ' নামে প্রথম একটি টুপির দোকান খোলেন। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালে ফ্রান্সের ডভিলে আরও একটি দোকান চালু করেন। একইসাথে তিনি খুব সাধারণ কিছু স্পোর্টসওয়্যারও বিক্রি করতেন। পাঁচ বছরের মধ্যেই এ গরীব মেয়ের ডিজাইন করা পোশাক সমাজের প্রভাবশালী মহলে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।

আর এভাবেই নারীর ফ্যাশনে আরামদায়ক পোশাকের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইতিহাসে 'হাউজ অফ শ্যানেল' এর কিংবদন্তী পদযাত্রার শুরু হয়। ১৯২০ সালের মধ্যেই শ্যানেল ইন্ডাস্ট্রিজের মূল্য কয়েক মিলিয়নে পৌঁছে যায়। একইসাথে শ্যানেলের সুগন্ধি গবেষণাগার, বস্ত্র কারখানা এবং জুয়েলারি ওয়ার্কশপ- সব মিলে প্রায় ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সব ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখেন। ১৫ বছর পর ১৯৫৪ সালে ৭১ বছর বয়সে অনেক বাধাবিপত্তি ঠেলে নতুন করে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ফ্যাশনে অস্কার পুরস্কার পান।

১৯৭০ সালের ১০ জানুয়ারি প্যারিসের হোটেল রিটজ এ নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্টে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কোকো শ্যানেল। শত শত ভক্ত চার্চ অফ ম্যাডেলিনে শ্যানেল স্যুট পরেই এই কিংবদন্তী ডিজাইনারকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন। তার মৃত্যুতে হাউজ অফ শ্যানেলের খ্যাতি কখনোই কমে যায়নি। বরং এই হাউজটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড।

কোকো শ্যানেলের মৃত্যুর ঠিক এক যুগ পরে ১৯৮৩ সালে জার্মানিতে জন্ম গ্রহণকারী ডিজাইনার কার্ল লগারফেল্ড হাউজ অফ শ্যানেলের প্রধান ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ব্র্যান্ডটিকে আজকের জনপ্রিয় অবস্থানে নিয়ে আসেন।

ইএ