নরসিংদীতে শিশুদের সাঁতার শেখার জন্য নেই সুইমিংপুল, শঙ্কিত অভিভাবকরা

নরসিংদীতে শিশুরা কচুরিপানাভর্তি জলাশয়ে সাঁতার কাটছে | ছবি: এখন টিভি
0

নরসিংদীতে নেই কোনো সরকারি সুইমিংপুল বা সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এতে সাঁতার শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। এ অবস্থায় শঙ্কায় অভিভাবকরা। ভবননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে এসে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুইমিংপুল নির্মাণের আহ্বান প্রতিষ্ঠান প্রধানের। জরিপ বলছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে।

দেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় প্রায় ১৯ হাজার মানুষ। কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে, যার মধ্যে ৪০ জনই শিশু। এ মৃত্যৃর অন্যতম কারন হিসেবে দাঁড় করানো হয় সাঁতার না জানাকে।

দেশে কত শতাংশ মানুষ সাঁতার জানে সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই। তবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, নতুন প্রজন্মের অধিকাংশই সাঁতার জানেন না। কেন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সাঁতারে অনাগ্রহী, সাঁতার শেখার পথে সমস্যাই বা কোথায়— এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজারই চেষ্টা করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, সাঁতার শেখার জন্য কোনো ভালো জায়গা পায়নি তারা।

একজন স্থানীয় যুবক জানান, পুকর বা নদী থাকলেও সেগুলো আবর্জনায় পূর্ণ। এগুলোতে সাঁতার শেখা বা শেখানোর মতো পরিস্থিতি নেই।

অভিভাবকদের মধ্যে একজন জানান, দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার শিক্ষার অভাব রয়েছে। তাই যদি এ ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

এ অবস্থায় শঙ্কিত অভিবাবকরা। জেলায় নেই কোনো সরকারি সুইমিংপুল বা সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। শিশু-কিশোররা বঞ্চিত হচ্ছে সাঁতার শেখার সুযোগ থেকে। বেসরকারি উদ্যোগে দু’একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে জানায় এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

নরসিংদী অনির্বানের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নদীটা আমরা গত বছরের মতো পাইনি, নোংরা হয়ে গেছে। তাছাড়া সামগ্রিক পরিবেশটা আমাদের অনুকূলে ছিল না। এ কারণে আমরা সাঁতার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটা করতে পারিনি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নরসিংদী নয় বরং বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় সুইমিংপুল অত্যন্ত জরুরি।’

ভবন নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে এসে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুইমিংপুল নির্মাণের আহ্বান প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের। অপরদিকে, সরকারি পুকুরগুলো ব্যবহার করে সাঁতার শেখানোর পরিকল্পনার কথা জানান জেলা শ্রশাসক।

নরসিংদী রেসিডেন্সিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের পরিচালক আরিফ পাঠান বলেন, ‘অধিকাংশ জেলা বা উপজেলাগুলোতে সুইমিংপুল নেই। প্রতিটি উপজেলাতে অন্তত একটি সুইমিংপুল নিশ্চিত করা যেতে পারে।’

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘একটা সুইমিংপুল তৈরির জন্য জমির ব্যাপার থাকে। সেটা আবার বেশি দূরে হওয়া যাবে না, দূরে হলে মানুষ সেখানে যেতে আগ্রহী হবে না। জমি পাওয়াটা একটা বিষয় এবং সেটাকে ঘিরে একটা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের সাঁতার শেখানো উচিত। পাশাপাশি শিশুদের নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণ ও অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।

এসএইচ