১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই সকালে দুর্গাপুরের বিরিশিরি থেকে কলমাকান্দায় পাকহানাদার ক্যাম্পে রসদ যাবার খবর পান মুক্তিযোদ্ধারা। খবর পেয়েই নেত্রকোণার এই অঞ্চলের কোম্পানির কমান্ডার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল পরিকল্পনা অনুযায়ী অবস্থান নেয় নাজিরপুরে। যা টাইগার দল নামেও পরিচিত। দলটি ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে বাজারের সব কয়টি প্রবেশ পথে অ্যাম্বুস করেন।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও পাকহানাদার বাহিনী না আসায় তাদের অ্যাম্বুস প্রত্যাহার করে নিজ ক্যাম্পে ফেরার প্রস্তুতি নেয় কোম্পানির কমান্ডার নাজমুল হক তারা। পথে নাজিরপুর ভূমি অফিসের সামনে বসে দলের সকল সদস্যদের নিয়ে চা মুড়ি খেতে বসেন। এই দিকে নাজিরপুরে মুক্তিযুদ্ধে অবস্থান টের পেয়ে রাজাকাররা পাকবাহিনীদের সতর্ক করেন। সতর্ক বার্তা পেয়ে পাকহানাদার বাহিনী নৌকায় করে নাজিরপুর কাচারির কাছে পৌঁছেই মুক্তিযোদ্ধার উপর অতর্কিতে গুলি বর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকেন।
এক পর্যায়ে এই সম্মুখযুদ্ধে ঘটনাস্থলেই শহিদ হন সাতজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জাতির এই বীর সন্তানরা হলেন নেত্রকোণার আবদুল আজিজ ও মো. ফজলুল হক, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মো. ইয়ার মামুদ, ভবতোষ চন্দ্র দাস, মো. নূরুজ্জামান, দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস ও জামালপুরের মো. জামাল উদ্দিন।
সম্মুখ এই যুদ্ধে ঘাড়ে গুলি লেগে আহত হন টাইগার দলের প্রধান কোম্পানির কমান্ডার নাজমুল হক তারাসহ অনেকেই। মুক্তিযোদ্ধারা আহত নাজমুল হক তারাসহ শহিদ সাত জনের মরদেহ উদ্ধার করে কলমাকান্দার লেঙ্গুরায় পাহাড়ি নদী গণেশ্বরী পাড়ের ফুলবাড়ীর বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের শূন্য রেখায় ১১৭২ নং পিলার কাছে শহিদের ২ ভাগে সমাহিত করা হয়। আর আহত কোম্পানির কমান্ডারকে চিকিৎসার জন্য ভারত নিয়ে যায়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘ দিন এই শহিদের কোনো খবর না রাখলেও স্থানীয়রা এই দিনটি পালন শুরু করে। পরে তাদের কাছ থেকে জেলা প্রশাসন যথাযথ মর্যাদায় নেত্রকোণাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবছর দিনটিকে ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
তবে ঐতিহাসিক এই দিবসের কোনো ইতিহাস এখন পর্যন্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা। তারা জানায় নাজিরপুর যুদ্ধ একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ। দেশ যেসকল সম্মুখযুদ্ধে হয়েছে তার মাঝে এটি অন্যতম। তাই দ্রুত সংরক্ষণ করার দাবি তাদের।
কলমাকান্দার ইউএনও ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় নাজিরপুর স্মৃতিসৌধে এবং ১১ টায় লেঙ্গুরায় সাত শহিদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এ ছাড়া বাদ যোহর লেঙ্গুরায় জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও একই সময়ে স্থানীয় অন্যান্য মসজিদ মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।