বাড়ির দেয়ালে ঝুলে আছে শহিদ হাসানের ছবি। যে ছবি আঁকড়ে কাটছে পরিবারের জীবন। ভোলার কাচিয়া ইউনিয়নের সামাদার গ্রামের বাসিন্দা শহিদ হাসান। জুলাই বিপ্লবে ৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যে বুক পেতে দিয়েছিলেন দেশের জন্য।
পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের প্রতিটি দিন কাটছে বিভীষিকাময়। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে আহত অবস্থায় হাসানের একটি ছবি ভাইরাল হয় ফেসবুকে। এরপর পরিবার হাজারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও খোঁজ পায়নি হাসানের। মৃত্যুর সাত মাস পর ডিএনএ শনাক্তের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাওয়া যায় তার মরদেহ। পরে নিথর দেহ ফিরে এসেছিল বাড়িতে। কিন্তু ভোলার জেলার ৪৮ জন শহিদের ৪৭ জনের নাম সরকারি তালিকায় উঠলেও আজও উঠেনি তার নাম।
জেলার বাকি শহিদ পরিবার সরকারি অনুদান বা সুযোগ-সুবিধা পেলেও তালিকায় নাম না থাকায় হাসানের পরিবার সব সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। এমনকি নেই প্রাপ্য সন্মানটুকুও।
হাসানের মা বলেন, ‘সন্তান হারানোর যে কত বেদনা আর কত ব্যথা, এটা কাউকে বোঝানো যাবে না।’
হাসানের বাবা বলেন, ‘সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত আমি ১০ টাকার কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমি যেকোনো জায়গায় দৌড়লে বলে হবে, হবে।’
স্থানীয়রা বলছেন, রাজপথে রক্ত দেয়া হাসানের প্রাপ্য সম্মান আদায়ে স্থানীয় পর্যায়ে বহুবার দাবি জানানো হলেও নেই কোনো অগ্রগতি। তবে সম্প্রতি নতুন করে আহত জুলাই যোদ্ধার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ২৬ নাম। যাদের বেশিরভাগই ভুয়া বলছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
আন্দোলনে অংশ নেয়াদের মধ্যে একজন বলেন, ‘হাসানের পরিবারে হাসানই একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। যার রোজগারে সংসার চলতো।’
অন্য একজন বলেন, ‘যাদের মাধ্যমে আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়বো তাদের মধ্যে বৈষম্য রয়ে গেছে।’
জুলাই যোদ্ধাদের তালিকার যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যরা বলছেন, দ্রুত শহিদ হাসানের নাম গেজেটে তালিকাভুক্ত করা হবে। এছাড়া জুলাই যোদ্ধাদের তালিকায় ভুয়া কারও নাম থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ বলছে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তারা যদি প্রোপার ডকুমেন্টসহ আমাদের কাছে আবেদন করে, নাম, ঠিকানাসহ। তাহলে জেলা কমিটিতে আমরা সংশোধন করে আবার ঠিক করে পাঠাবো।’
ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, ‘শহিদ হাসানের আবেনটি পরে পাওয়া এবং আমরা তার বিষয়ে সব তথ্য নিয়ে জেলা কমিটির মিটিং করে গেজেটের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। এখনও গেজেট হয়নি তবে আমি আশা করছি শিগগিরই গেজেট হয়ে যাবে।’
হাসানের পরিবার বলছে, দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের পরিবারের সুযোগ সুবিধার চেয়েও বেশি জরুরি রাষ্ট্রীয় সম্মান।