জুলাই থেকেই ছাত্র-জনতা হত্যা ও গণগ্রেপ্তারের ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির লাভার মত ছড়িয়ে পড়ে ২ আগস্টের দ্রোহযাত্রায়। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় হত্যাযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়ে ৫৭ হাজার বর্গমাইলজুড়ে, কারবালা এসে নামে বাংলাদেশের বুকে।
আরও পড়ুন:
ছাত্র-জনতার রক্তের দায় শোধ করতে ক্ষোভে মাঠে নেমে পড়েন শিক্ষক-ছাত্র, আইনজীবী, মুটে-মজুর, ঠেলাওয়ালা থেকে চাকরিজীবীরা। প্রেসক্লাব থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর ও টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে হাজারো মানুষের কণ্ঠে, হাতের প্ল্যাকার্ডে, স্লোগানের দ্রোহযাত্রা প্রতিধ্বনিত হয় স্বৈরাচারের প্রতি তীব্র ঘৃণা।
আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, ‘যখন আমরা হাঁটা শুরু করলাম, আমি মিছিলের মাঝামাঝি ছিলাম তো, সামনে পেছনে মিছিলের শুরু কোথায় শেষ কোথায়, সেটা দেখা যাচ্ছিল না— এত মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিলেন। এ বিপুল সংখ্যক মানুষ, তাদের ক্ষোভ-দ্রোহ, সেটা এ মিছিলের স্লোগান, মানুষের অভিব্যক্তি থেকেই একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল এবং সেটাই বোধহয় এ মিছিলে অংশ নেয়া মানুষেরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, এ সরকারের সময় ফুরিয়ে আসছে।’
আরও পড়ুন:
মরদেহ আর তাজা রক্তের তাপে বিদ্রোহ হয় দ্বিগুণ। জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অভিমুখ আগষ্টে পৌঁছাতেই ধাবিত হতে থাকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে। অসংখ্য ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ লাগে স্বৈরাচারের হাতে। ফলত অনিবার্য বিপ্লবের হাতছানি দেয় লাল-সবুজের বুক। ৩ আগষ্ট হাজারো ছাত্র-জনতাকে সামনে রেখে সূর্যাস্তের আগে শেষ বিকেলে শহিদ মিনারে আরেক নতুন সূর্যোদয় ঘটালো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এদিন শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপের ঘোষণা দিয়ে সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দেন নাহিদ ইসলাম। হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন সেবা ছাড়া বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব পরিষেবা।
শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, রাষ্ট্রের নতুন বন্দোবস্ত তৈরি। দেশে আর যাতে কখনো স্বৈরতন্ত্র ফিরতে না পারে সেলক্ষ্যেই এক দফার ঘোষণার কথা জানান নাহিদ ইসলাম। জনগনের দাবির প্রতিধ্বনিই ছিল হাসিনা পতনের ঘোষণা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এক দফার মাধ্যমে আমরা বলতে চেয়েছি যে, শুধু রেজিম এর পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের বন্দোবস্তের পরিবর্তন, সংস্কার এবং সৈরতন্ত্র বাংলাদেশে আর ফিরে না আসতে পারে এরকম একটা গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত তৈরি করি। সে জায়গা থেকেই আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমরা ৩ আগস্ট এক দফা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ওই দিন শহিদ মিনার থেকে জনগণই এ ঘোষণা দিয়েছিল, আমরা শুধু সেটা প্রতিধ্বনি করেছিলাম।
শহিদ মিনার প্রাঙ্গণের ঐতিহাসিক এ ঘোষণার মধ্যে দিয়েই দেড় দশকের সীমাহীন জুলুম ও স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ।