ফিরে দেখা ৪ আগস্ট: লং মার্চ টু ঢাকার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা

জুলাই ক্যালেন্ডার
জুলাই ক্যালেন্ডার | ছবি: এখন টিভি
0

অসহযোগ আন্দোলন আর স্বৈরাচারী সরকার কবে পালাবে, তা ঠিক হয়েছিল আজকের (৪ আগস্ট, গণঅভ্যুত্থান ক্যালেন্ডারে ৩৫ জুলাই) দিনেই। দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলনে বন্ধ ছিল দোকানপাট ও যান চলাচল। পুলিশের পাশাপাশি নামে আওয়ামী বাহিনীও। চারদিকে নিহত পরিবারগুলোর আহাজারি যেন সেদিন কাঁপিয়ে দিয়েছিল ক্ষমতার মসনদ।

কারফিউ, গুলি আর রক্তে রাঙা আরও একটি দিন চব্বিশের ৪ আগস্ট। তবু রাস্তায় ছাত্র-জনতা, চলছে অসহযোগ আন্দোলন। বন্ধ দোকান-পাট, যান চলাচল। তীব্র ক্ষোভ আর বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ। রাজধানী থেকে মফস্বল সর্বত্রই এক দাবির প্রতিধ্বনি ‘দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’

তখনো জুলাই শেষ হয়নি। ৩৫ জুলাই, মৃত্যুকে সহজভাবে বরণ করেছে এদেশের ছাত্র-জনতা। ‘একজন মরে, সেই সরে আর কেউ সরে না’ বলা পুলিশের মনেও ভয়। তাই এদিন অস্ত্র হাতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে নেমেছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঢাকার বেশ কিছু রাস্তার উপর ফেলে রাখা হয় লাশ।

এদিন একাদশ শ্রেণির ছাত্র গোলাম নাফিজকে ফার্মগেট এলাকায় গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। রিকশায় রক্তাক্ত দেহ নিয়ে হাসপাতালে ছুটে চলার ছবি ভাইরাল হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা।

দুপুর পর থেকে সারাদেশে বন্ধ করে দেয়া হয় ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ মেটার সব পরিসেবা। বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেটও।

সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে জারি করা হয় কারফিউ। একইসঙ্গে সরকার তিন দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছিল, যেখানে সকল স্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ আর পুলিশের ফায়ারিং তখনো চললেও, ভরসার বিষয় ছিলো সেনাবাহিনী তখন ফায়ার করেনি শিক্ষার্থীদের ওপর।

বিকেলে বিক্ষোভকারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চারজন নিহতের মরদেহ নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। সেখানে চলে শোক, ক্ষোভ আর প্রতিবাদ। সেখান থেকে শাহবাগ অভিমুখে রওনা হলে, রাজু ভাস্কর্যে বাধা দেয় পুলিশ। অন্যদিকে ছাত্ররা হলের তালা ভেঙে দখল নেয় হলের।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব জাহিদ হাসান বলেন, ‘নিজেরা লাঠি বা রড হাতে নিয়ে প্রতিটা হলের তালা ভেঙে দিই। এবং আমরা ছাত্রদের জানিয়ে দিই, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে সবগুলো হল খুলে দেয়া হয়েছে, আপনারা সবাই চলে আসুন। আমরা চূড়ান্ত গণঅভ্যুত্থানের দিকে যাচ্ছি।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা বলেন, ‘লং মার্চ টু ঢাকার যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছি, তা ৬ তারিখে সফল নাও হতে পারে। একটা দিন হাসিনার হাতে সময় আছে। এরইমধ্যে হাসিনা ঢাকার সকল পথ বন্ধ করে ভিন্ন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এজন্য আমরা এটা এগিয়ে আনি। এতে করে অনেকেই হয়তো ঢাকায় আসতে পারবে না। কিন্তু ওই মুহূর্তে ঢাকায় যে পরিমাণ মানুষ ছিলো, তা হাসিনার পতনের জন্য যথেষ্ট।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘৩ আগস্টের ঘোষণা হঠাৎ করে আগে দিলে হতো না। এটা ৩ আগস্টেই দিতে হতো। এজন্য ৪ আগস্টের ঘোষণার পর আমরা বুঝতে পারলাম যে, ৫ আগস্টে যা করার করতে হবে। হাসিনার পতন করতে হবে, এটা কিন্তু মধ্য জুলাই থেকে ছাত্রদের পরিকল্পনায় আছে। কিন্তু তারা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো।’

আরও পড়ুন:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঘোষণা করে ৬ তারিখ নয়, আগামীকাল ৫ আগস্ট পালিত হবে মার্চ টু ঢাকা।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘যেভাবে আওয়ামী লীগ ঢাকার বাইরে থেকে সন্ত্রাসীদের ঢাকায় নিয়ে এসেছে, এতে আমরা ৬ তারিখে লং মার্চ করতে গেলে ঢাকায় ঢুকতে পারবো না। আমি একটা ভিডিও বার্তা দিয়ে ঘোষণা করি যে, ৬ তারিখের লং মার্চ আমরা ৫ তারিখে নিয়ে আসছি। এগিয়ে আনার বিষয়টা নাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে হয়ে ওঠেনি, কারণ তখন ইন্টারনেট বন্ধ ছিলো। আমরা পাচ্ছিলাম না। নাহিদ ভাই নিজে শাহবাগে ছিলেন। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি, শাহবাগ থেকে উনি আমাদের একজন শিক্ষকের বাসায় গিয়েছিলেন।’

দেশজুড়ে চলছে অসহযোগ আন্দোলন। চারদিকে শোক, প্রতিবাদ, রক্ত আর প্রতিরোধের ভিন্ন ভিন্ন স্মৃতি। মার্চ টু ঢাকার কী হবে পরিণতি, তা দেখার অপেক্ষায় ৫ আগস্ট। এরপর লাখো মানুষ নেমে এলেন রাজপথে। আরও একবার বুলেট বোমার কাছে মাথা নোয়ায়নি বাংলাদেশ।

ইএ