এমন সব বিধিনিষেধ এবং বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ২০২৫ চূড়ান্ত করেছে ইসি। শেষ মুহূর্তে চলছে আরপিও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যয়বহুল হলেও হতাহত ঠেকাতে ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা।
নির্বাচন ঘিরে সংঘাত সহিংসতা— প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চলে আধিপত্য বিস্তার, বাদ যায় না কেন্দ্র দখলও। এমনসব অভিযোগ, অসংগতিতে বন্ধ হয় ভোট কার্যক্রম।
ভোটের সময়ে এসব ঘটনা এড়াতে প্রার্থী ও দলের প্রচার-প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘনে নির্বাচন কমিশন কঠোর হলেও এসব যেন প্রতিটি নির্বাচনের নিয়মিত ঘটনা।
আরও পড়ুন:
সবশেষ ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমন সংঘাত-সহিংসতা আর আচরণবিধি লঙ্ঘনে ঘটে বেশ কিছু প্রাণহানি। নির্বাচনী সহিংসতায় বিগত ৩ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার অর্ধশতের বেশি প্রাণহানি ঘটে। আহত সংখ্যা দাঁড়ায় কয়েক হাজারে।
আচরণ বিধিমালা চূড়ান্তে হলেও বহুল ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার নিয়ে শঙ্কিত খোদ কমিশন প্রধানও। তাইতো এবারের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ২০২৫ এ বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে বিষয়টি।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ নজরদারির কথা ভাবছে কমিশন। সবশেষ কমিশন সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও নতুনভাবে আরপিও যাচাই-বাচাই করছে ইসি।
এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা। তবে এ নিয়ে বারবার বৈঠক করেও, এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না কমিশন। তাহলে চ্যালেঞ্জটা কোথায়?
ডিজিটাল ভেরিফিকেশন বিশেষজ্ঞ কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ‘ইলেকশনের সময় যদি কোনো ভিডিও ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অনলাইনে থাকে এবং সেটা যদি মিসইনফরমেশনযুক্ত হয়, তাহলে কিন্তু যেকোনো এলাকায় বা পুরো দেশে ভোটার বিহেভিয়ার চেঞ্জ করে ফেলতে পারে।’
এছাড়া ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরার ব্যবহারের কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের শঙ্কা, দেশের ৪৫ হাজার ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রই নয়, ব্যয়বহুল হলেও সব কেন্দ্রেই সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে ইসিকে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এবার সবগুলো কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মানুষের জীবন বাঁচাতে, খরচ একটু বাড়লেও সিসিটিভি বসানোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব কেন্দ্রে এটা বসিয়ে শক্তভাবে মনিটরিং করা দরকার।’
প্রচারণায় পোস্টারের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাও থাকছে এবার। তবে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারে সুযোগ থাকছে। তবে এতে আনা যাবে না বিদেশি অর্থায়ন।
সরকারি সমগ্রী ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রাখা হচ্ছে। তবে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে উৎসাহী করছে ইসি। একই সঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি সর্বোচ্চ প্রার্থীতা বাতিলসহ কমন প্লাটফর্মে থেকে প্রার্থীদের ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ রাখতে চায় কমিশন।
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘিরে বাকি যখন ৪ মাস, তখন নির্বাচন ঘিরে তৎপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এবং যৌথ বাহিনীও। তবে দ্রুত আচরণবিধি চূড়ান্ত করে এর প্রয়োগে কতটা কঠোর হতে পারবে কমিশন সেটা হয়তো সময়ই বলে দেবে।