বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন। কয়েক মাস আগে তার শরীরে বিভিন্ন কারণে অস্ত্রোপচারও করা হয়। জুন মাসে নেত্রকোণার নিজ বাড়িতে শোবার কক্ষের বারান্দা থেকে পত্রিকা আনতে গিয়ে পড়ে গিয়ে তার ডান কাঁধে নেক ফ্যাকচার হয় এবং এরপর তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অধ্যাপক যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোণার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক দীর্ঘকাল মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি দুইবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
লেখক হিসেবে তার অবদান অনন্য। তিনি ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পদক, ২০০৫ সালে ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
শিক্ষকতা জীবনে ৪২ বছরের বেশি সময় কাজ করার পর ২০০২ সালে অবসর নেন। এরপর স্ত্রী কানন সরকারের সঙ্গে নেত্রকোণায় ফিরে যান।
তার প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। এর পর তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা: ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’। শিশুদের জন্য লিখেছেন সুপাঠ্য ব্যাকরণ গ্রন্থ ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ (১৯৯৪, বাংলা একাডেমি)।
জীবনী ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি চারটি বাংলা একাডেমি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন—‘কেদারনাথ মজুমদার’, ‘চন্দ্রকুমার দে’, ‘হরিচরণ আচার্য’, ‘সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী’। সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—‘রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী’, ‘প্রসঙ্গ মৌলবাদ’ ও ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা: ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন’, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার’, ‘সাহিত্য নিয়ে নানাকথা’।