রেলওয়ে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা

বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল
বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল | ছবি: এখন টিভি
1

বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ খোদ রেলওয়ের কর্মীরা। অনীহা প্রকাশ করে নিচ্ছেন না চিকিৎসাসেবা। তাদের অভিযোগ, বাজেট স্বল্পতা, রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ছাপ হাসপাতালগুলোতে সর্বত্র দৃশ্যমান। চিকিৎসকদের ভাষ্য, নানা সংকটের মধ্যে ও সীমিত লোকবল নিয়ে সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তারা।

ঢাকার রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের অনিয়মের নথি এখন টেলিভিশনের হাতে আসে।

সে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে এখন টিভির প্রতিনিধি দল ১৯৮৬ সালে ছয় একর জমির ওপর নির্মিত শান্ত ছায়া শীতল পরিবেশে ঘেরা হাসপাতালটিতে রেলপথের যাত্রী সেজে চিকিৎসা সেবা নিতে যায়।

এ কি? এ তো সোর্সের তথ্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সব চিত্র, হাসপাতালে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটেও ল্যাবে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। গাইনী বিভাগের ডাক্তারের উপস্থিত নেই, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে আলো পর্যন্ত জ্বলেনি।

কর্মচারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আছে হয়তো আশপাশে, চলে আসবে। কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে শুনতে হবে।’

রোগীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ওষুধ এখান থেকে যেটা দেয় সেটা দামি, বাইরে থেকে কিনতে হয়।’

বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত সদ্য জুন জুলাইয়ে হালনাগাদ করা এক চিঠিতে দেখা যায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের সংখ্যা ছয়, নার্স ১১ ও ফার্মাসিস্ট রয়েছে ১০ জন। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল চলতি মাসে সকাল-বিকেল-রাত তিন শিফটে ভবনে মাত্র একজন করে নার্স দায়িত্ব পালন করছেন, চিকিৎসক ছিলেন দুই আর ফার্মাসিস্ট ছিলেন একজন।

হাসপাতালটিতে এক্সরে মেশিন নষ্ট, ওটি থাকলেও সার্জারির বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই এখানে। মেডিকেল সরঞ্জাম জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

ফার্মাসিস্ট বলেন, ‘ফার্মাসিস্টের পোস্ট সাতটি। কিন্তু আমি কর্মরত আছি একটা। আমার একাকে সবকিছু সামলাতে হয়।’

এমন অবস্থায় কর্তব্যরত নার্স বললেন, সব কিছুতেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ধুঁকছে সত্যি কিন্তু এরমধ্যেই কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তারা।

নার্স বলেন, ‘আমাদের নার্সও একজন।’

আরও পড়ুন:

এবিষয়ে রেলওয়ের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা জানান, সেবা প্রদানে অবহেলা, গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা।

ঢাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সাজেদা বেগম ডেইজী বলেন, ‘সরকারি অফিস যেভাবে চলে সেভাবেই চলছে। হাসপাতালের মতো না। মানে ৯টা থেকে ৫টা খোলা আবার শুক্র-শনি বন্ধ।’

এবারের গন্তব্য রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল। পাকশী ও সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালের দিকে এবার নজর দিতে চাই। রেল শহর ঈশ্বরদী, নদী বেষ্টিত বগুড়া ও পাবনা এ দুই জেলায় দুটি হাসপাতাল রয়েছে। যেখানে রোগী নেই বললেই চলে, জরুরি ও বহির্বিভাগে সুনসান নীরবতা।

কর্মচারীদের মধ্যে কজন বলেন, ‘ওয়ার্ড অ্যাটেনডেন্ট আটজনের মধ্যে দুইজন কর্মরত আছি। রোগী ভর্তি থাকলে যে খাবার দিতে হবে। সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।’

এবিষয়ে রেল ভবনে মহাপরিচালকের সাথে যোগাযোগ করতে দুই কার্য দিবস চেষ্টা করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

আর রেলপথ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, রাষ্ট্রীয় কাজে বৈঠকে তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন।

পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে সব মিলিয়ে ১০টি হাসপাতাল রয়েছে। এই হাসপাতালগুলোতে মোট শয্যা সংখ্যা ৪৩১টি। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণ,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাসহ মাসে এই হাসপাতালগুলোর পরিচালনা ব্যয় প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ লাখ টাকার বেশি।

এসএস