ছাত্রশিবিরের ছদ্মনামে সহিংসতা, বাগছাস’র নিন্দা-প্রতিবাদ

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের লোগো
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের লোগো | ছবি: সংগৃহীত
0

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছদ্মনামে পরিচালিত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা, উস্কানি এবং বিভিন্ন স্থানে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)। গতকাল (বৃহস্পতিবার, ২৯ মে) সংগঠনটির মুখপাত্র আশরেফা খাতুন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম বা ছদ্মনামে পরিচালিত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা, উস্কানি ও নারীঘৃণার মতো বর্বর আচরণ বারবার সামনে আসছে। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণের যে আকাঙ্ক্ষা ছাত্রসমাজ ধারণ করেছিল, সেই চেতনার সাথে শিবিরের বর্তমান অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের আদলে এই দায় এড়ানোর রাজনীতিকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ প্রত্যাখ্যান করে।’

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘আমরা দেখেছি পতিত স্বৈরাচারের সহযোগী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ তাদের বিরোধী মতাদর্শের কোনো কর্মসূচি বা আন্দোলনের বিপরীতে নিজেদের কর্মসূচি দিয়ে সেখানে সংঘর্ষে জড়ানোসহ ভিন্নমত দমনে সহিংসতা ও উগ্রপন্থার আশ্রয় নিত। অনুরূপ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বর্তমান ছাত্রলীগের কায়দায় নামে বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি প্রণয়ন তাদের নতুন করে ফ্যাসিবাদী ছাত্র রাজনীতির দিকের যাত্রার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিগত স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শাসনের আমলে ইসলামী ছাত্রশিবির নিজেই রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। সেই ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা বলি, মজলুম থেকে জালিমে পরিণত হওয়ার এই বিবর্তন শুধু দুঃখজনকই নয়, ছাত্রসমাজের প্রতি এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শিবির আজ ভিন্নমত গ্রহণে অক্ষম, তারা ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান দেখলেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে ক্যাম্পাসে বিভ্রান্তি, অস্থিরতা ও গুপ্তচর-রাজনীতির চর্চা করছে, যা গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিপন্থি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের মিছিলের সাথে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধী মতের কর্মসূচিতে ধারাবাহিক উস্কানি ও বাধা প্রদান এবং চট্টগ্রামে এক ছাত্রীকে পা দিয়ে আঘাত করে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি, এসব কিছুই আদর্শগত বিচ্যুতি ও রাজনৈতিক বিপজ্জনক রূপান্তরকে স্পষ্ট করে তুলেছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, গুপ্ত রাজনীতি চর্চা, গুপ্ত এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রবণতা ছাত্ররাজনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি।’

সংগঠনটি জানায়, ‘আমরা মনে করি, ছাত্ররাজনীতি হবে উন্মুক্ত, মতপ্রকাশ থাকবে মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক ভিন্নতা হবে সম্মানিত। ইসলামী ছাত্রশিবির কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তি যদি এসব মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাহলে তাদের সেই অবস্থানের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে রুখে দাঁড়াতেই হবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানায়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগঠিত সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং শিক্ষাঙ্গনকে উগ্রবাদ ও সহিংসতা থেকে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করতে হবে।’

ছাত্রশিবিরকে গুপ্ত রাজনৈতিক চর্চা থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ছাত্রশিবিরকে তাদের এই গুপ্ত রাজনৈতিক চর্চা থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানাই। আমরা ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- এখনই সময়, ঐক্যবদ্ধভাবে ক্যাম্পাসজুড়ে সকল প্রকার উগ্রতা, গুপ্তচর রাজনীতি এবং গণতন্ত্রবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার।’

এসএস