অব্যাহত ডেঙ্গু সংক্রমণ, দুই সিটি করপোরেশনের ভূমিকা কী!

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী, এডিস মশার লার্ভা
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী, এডিস মশার লার্ভা | ছবি: এখন টিভি
0

এবছর মৌসুমের আগেই বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বর। কয়েল জ্বালিয়ে বা অ্যারোসল দিয়েও মিলছে না মুক্তি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জরিপ বলছে, দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়েও বেশি। অভিভাবকশূন্য সিটি করপোরেশনে ভাটা পড়েছে কাজের ধারাবাহিকতায়, কমেছে মশক নিধন কার্যক্রম।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইহসানের পড়ার টেবিলে বসতেই মশার কামড়ে মনোযোগ ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু আতঙ্কে তার পরিবার।

ইহসানের মা বলেন, ‘খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে বলে। বলে আম্মু আমার পরীক্ষা, আমাকে পড়াও। কিন্তু পড়তে বসলে যখনই মশা কামড়ায় তখনই বলে, আম্মু ভালো লাগছে না, পড়বো না।’

ইহসান বলেন, ‘মশা কামড়ায় প্রতিদিন। এর জন্য আমি পড়তে পারি না। সামনে আমার পরীক্ষা।’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে মশার উপদ্রব, বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি। গত কয়েক সপ্তাহে আবহাওয়ার পরিবর্তন, অতিবৃষ্টিতে প্রায় সব ওয়ার্ডেই বেড়েছে মশার প্রজনন। ফলে কয়েল জ্বালিয়ে বা অ্যারোসল দিয়েও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অনেক মশা। কয়েক বছর ধরেই আমরা মশার কামড় সহ্য করছি।’

অন্য একজন বলেন, ‘মশারি টাঙালে হয় না। কারণ আমাদের তো মশারি থেকে বের হতে হয়। ওইটুকুর মধ্যেই অনেক মশা ঢুকে যায়।’

এখন টেলিভিশনের প্রতিনিধি দল যে স্থানে থেকে প্রতিবেদনটি তৈরি করছে তা একটি বাসার প্রবেশ পথ। সিটি করপোরেশনের নিষ্কাশন নজরদারির অভাবে এ এলাকায় বেশ কয়েকটি বাসার সামনে সারাবছরই পানি জমে থাকে। নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পুরো এলাকায় ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভাড়াটিয়াদের মধ্যে একজন বলেন, ‘সরকার যাওয়ার পর থেকে সিটি করপোরেশনের লোকরা আর আসে না। আগে দতাও দুই একজন আসতো। এখন তাও আসে না।’

গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে চালানো আইইডিসিআরের প্রাক-বর্ষা জরিপে দেখা যায়, রাজধানীর দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি।

এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ঝুঁকিতে রয়েছে ছয়টি ওয়ার্ড। আর দক্ষিণে সাতটি। উত্তরের ১২ আর দক্ষিণে ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও অভিভাবকশূন্য সিটি করপোরেশনের কাজের ধারাবাহিকতায় ভাটা পড়েছে। মেয়র-কাউন্সিলর না থাকায় এবছর ডেঙ্গু নিয়ে বেশি আতঙ্কিত নগরবাসী। এছাড়াও স্প্রে ও ফগিংসহ সিটি করপোরেশনের নিয়মিত মশা নিধন ব্যবস্থাও হ্রাস পেয়েছে।

নগরীতে বসবাসকারী এক নাগরিক বলেন, ‘প্রচুর মশা। এত পরিমাণ মশা বাড়ছে যে এদের জ্বালায় বসাই যায় না। মেয়র নাই, কাউন্সিলর নাই। নির্বাচিত সরকারও নাই। আমাদের জনগণের দুর্ভোগ দেখবে কে?’

চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে সাত হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক তিন শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক সাত শতাংশ নারী রয়েছেন। আর মারা গেছেন ৩০ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ২১০ জন। যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৭০ শতাংশ। যার অধিকাংশই রাজধানী ও এর আশপাশের বাসিন্দা।

গত জানুয়ারি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ৩৪০ জন ডেঙ্গু রোগী। সমাজকর্মীরা বলছেন, প্রয়োজনের চেয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নগণ্য। দক্ষিণ সিটিতে এডিস দমনে নেই কার্যকর তৎপরতা।

সমাজকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, ‘যখনই যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বে বসে থাকে। তারা এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে মানুষ মনে করে না। আমরা এই স্পেশাল কাজগুলো বাদ দিলাম। সাধারণ যে রুটিন কাজ সে কাজগুলা পর্যন্ত হয় না। আমরা অনেক চেঁচামেচি করার পরও হয না। যারা বিভিন্ন চেয়ারে বসে আছে তারা আমাদের টাকাতেই চলছে। অথচ আমাদের মানুষ মনে করছে না। এটা হচ্ছে মূল সমস্যা।’

প্রতিবছর বিভিন্ন জরিপে রাজধানীর নির্ধারিত কিছু ওয়ার্ডকে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এসব স্থানে মশা বা লার্ভা কেন বেশি পাওয়া যাচ্ছে তা মৌসুম শুরুর আগে শনাক্ত করলেও সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বছর ব্যাপী নেয়া হয় না কোনো পরিকল্পনা। তাই স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।

এসএস