নিরাপত্তার স্বার্থে পুনরায় সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি পৌরবাসীর। আর পুলিশ বলছে, নতুন করে সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণে নেয়া হবে বাড়তি যত্ন।
দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাসের শহর চাঁদপুর। ২৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চাঁদপুর পৌরসভায় মানুষের পাশাপাশি বাড়ছে ভবনের সংখ্যা। শহরের জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে শহরজুড়ে ৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসায় জেলা পুলিশ।
ফলে শহরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমে আসার পাশাপাশি গতি বাড়ে পুলিশের কাজে। কিন্তু ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় এক বছরের মধ্যেই বিকল হয়ে যায় প্রায় সবগুলো ক্যামেরা।
সম্প্রতি শহরের স্ট্যান্ড রোড এলাকায় মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজ থেকে চুরি হয় ২০ লক্ষ টাকার পণ্য ও নগদ সাড়ে ৮ লাখ টাকা। খরব পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে থানা পুলিশের একটি দল। পরে সন্দেহভাজন ৪ আসামিকে আটক করলেও উদ্ধার করতে পারেনি চুরি যাওয়া পণ্য ও টাকা।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহার মিয়া বলেন, ‘শুনেছি আগে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা ছিল। এতে করে অপরাধীদের গতিবিধি নজরধারী করা সহজ হতো। কিন্তু এগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট হয়ে থাকায় আমাদের কাজ করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে অপরাধীদের শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে খুব কাজে আসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ।
তিনি বলেন, ‘কাজের সুবিধার্থে শহরের পাল বাজার এলাকায় নিজ উদ্যোগে ২টি সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। নিরাপত্তার পাশাপাশি যানজট নিরসনেও বড় ভূমিকা রাখে এগুলো। জননিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ সকল জায়গায় পূণরায় সিসি ক্যামেরা বসানো প্রয়োজন।’
চাঁদপুর শহরের ব্যস্ততম সড়ক, মার্কেট ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে তৎকালীন পুলিশ সুপার জিহাদুল কবিরের উদ্যোগে কালীবাড়ি, ছায়াবানী, নতুন বাজার, লঞ্চঘাট, বড় স্টেশন মোলহেড, বাস স্টেশনসহ ২৬টি স্থানে বসানো হয়েছিল ৬০টি সিসি ক্যামেরা।
পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে থাকা এসব ক্যামেরা ব্যবহারে শহরে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ কমে আসে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। কিন্তু এখন প্রতিটি এলাকা ক্যামেরা শূন্য।
সঠিক পরিচর্যার অভাবে ২ বছরের মধ্যে বিকল হয়ে গেছে সবগুলো সিসি ক্যামেরা। ফলে শহরে বেড়েছে চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ের ঘটনা। প্রায়ই মাথাচারা দিয়ে উঠছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
বড়স্টেশনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা কলেজ পড়ুয়া তরুণী তৃষা বলেন, ‘আগে এ পর্যটন এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকায় আমরা নিরাপদ বোধ করতাম। কিন্তু এখন ঘুরতে এসে অনেক সময় অনিরাপত্তায় ভুগী। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা বসানো প্রয়োজন।’
বড় স্টেশনের স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ‘এখানে দেশের বিভিন্ন জায়াগা থেকে মানুষ ঘুরতে আসেন। অনেক সময় মেয়েদেরকে ইভটিজিং করা হয়। প্রায়ই অল্প বয়সী পোলাপান দেশিয় অস্রের মহড়া দেয়। সিসি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারী থাকলে এগুলো করার সাহস পেত না।’
শহরের কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুজন আহমেদ বলেন, ‘আগে শহরজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোয় আমরা অনেক নিরাপদ বোধ করতাম। দিন কিংবা রাত অপরাধীরা কোনো ঘটনা ঘটানোর আগে ভাবতো সিসি ক্যামেরার কথা। এজন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতেও চুরির ঘটনা কম হত। তাছাড়া কেউ অপরাধে জড়ালে দ্রুত তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসত পুলিশ। তাই আমরা চাই শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত সিসি ক্যামেরা বসানো হোক।’
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ বলেন, ‘চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও পৌরসভার অর্থায়নে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছিল এসব ক্যামেরা। অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন বাজারের পাশাপাশি পুরানবাজার বাণিজ্যিক এলাকাও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা ছিল। আশা করি, আগামীতে নতুন বাজারের পাশাপাশি পুরানবাজারও সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ‘২০১৯ সালে বসানো সিসি ক্যামেরাগুলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অনেক কাজে আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় পরবর্তীতে যথাযথ রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে দুই-এক বছরের মধ্যে সব ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করছি সিসি ক্যামেরা পুনরায় চালু করার জন্য। বসানোর পাশাপাশি এগুলো রক্ষাণাবেক্ষণেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সিসি ক্যামেরা শুধু স্থাপন করলেই হবে না, প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ। এতে করে অপরাধ প্রবণতা কমার পাশাপাশি এ জনপদ অধিকতর নিরাপদ হয়ে উঠবে বলেও মনে করেন তারা।