রাজশাহী বিমানবন্দরে যাত্রীচাপ বাড়লেও লঙ্ঘন হচ্ছে বিমান নীতিমালা

রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর
রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর | ছবি: এখন টিভি
0

আগের তুলনায় আধুনিক হওয়ায় রাজশাহী বিমানবন্দরে বাড়ছে যাত্রীচাপ। তবে বিমানবন্দরের আশপাশে উঁচু গাছ থাকায় লঙ্ঘন হচ্ছে বিমান নীতিমালা। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ ব্যবস্থা। বৈমানিকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও, নেই তেমন কোনো তৎপরতা।

১৯৮৪ সালে চালু হয় রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর। মাঝে আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে ফের চালু হয় ফ্লাইট কার্যক্রম। এরপর ধীরে ধীরে যাত্রী যাতায়াত ও আর্থিক সম্ভাবনা বাড়ায় যাত্রীসেবা, রানওয়ে সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।

রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে গ্রামীণ জনপদের প্রায় ১৬২ একর জায়গায় গড়ে তোলা হয় রাজশাহী বিমানবন্দর। যাত্রীসেবা, রানওয়ে সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয় এ বছরের শুরুতে।

এরপর থেকেই দাপ্তরিক, বাণিজ্যিক কিংবা ঢাকার সঙ্গে দ্রুততম যোগাযোগের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে আকাশপথের। প্রতিদিন ৫টি ফ্লাইটে যাতায়াত করছে অন্তত পাঁচশো যাত্রী।

বিমানবন্দরের দুটি ফ্লাইং একাডেমিও বাড়িয়েছে তাদের প্রশিক্ষণ সময়। তাতে অনেকটাই কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে বিমানবন্দরটিতে। তবে বিপত্তি বেধেছে বিমানমবন্দরটির চারপাশে থাকা অন্তত পাঁচশো উঁচু গাছ নিয়ে।

রাজশাহী বিমানবন্দরের রানওয়ের দুই প্রান্তসহ তিন দিকে আছে এ সব উঁচু গাছ। খারাপ আবহাওয়ায় কিংবা রাতে উড্ডয়ন-অবতরণে এ গাছগুলো বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে, যা এরই মধ্যে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বৈমানিকরা।

একই সঙ্গে বিমান নীতিমালায় ‘আই.কাউ’ নিয়ম অনুযায়ী বিমানবন্দরের রানওয়ে প্রান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং কেন্দ্র থেকে ১৮০ মিটার পর্যন্ত কোনো বাধা রাখা যাবেনা।

পাইলট ও প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অনেক দূর থেকে ১ হাজার ২০০ ফিটে যখন আমরা থাকি তখন পাপি অনেক সময় দেখা যায়। কিন্তু যখন আমরা নিচে নেমে ৪৫০ ফিট এমডিএ, তখন এ পাপিটা দেখা যায় না। ফোর ওয়াইড হলে অনেক সময় আমরা নামতে পারি না। মিস অ্যাপ্রোচ করে চলে যাই।’

এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষক ও বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজশাহী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছেও।

দিলারা পারভীন বলেন, ‘ডাটা শিট তৈরি করার পরে আমরা জেলা প্রশাসনকে জানাই। পাশিপাশি আমরা ওনারদের সঙ্গেও কথা বলি।’

রাজশাহী বিমানবন্দরের তিন প্রান্তে তকিপুর, বাঘাটা, বৈরাগি ও মাস্তান পাড়ার গাছ মালিকরা বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন-অবতরণ সম্পর্কে সচেতন। কার্যকরী ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গাছের প্রকৃত সংখ্যা ও উচ্চতা নির্ণয়ে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস. এম রকিবুল হাসান বলেন, ‘গাছের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য সহকারি কমিশনার (ভুমি) এবং জেলা বন কর্মকর্তা রাজশাহীকে চিঠি পাঠিয়েছি এবং তারা সরেজমিনে তদন্দ করে গাছের প্রকৃত সংখ্যা এবং উচ্চতা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিবেন এবং প্রতিবেদন পাওয়া মাত্র গাছগুলো সরানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

রাজশাহী বিমানবন্দর কেন্দ্র করে ক্রমেই বাড়ছে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। এতে যে কোন দুর্ঘটনা এড়াতে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯৮ দশমিক ৬ হাজার ফুটের। এর দু’টি প্রান্ত দিয়ে বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরণ করছে। এ দুই প্রান্তের সীমানা প্রাচীর ঘিরে যে বড় বড় আম গাছ তাতে রানওয়ের এপ্রোচ লাইট দেখেতে সমস্যা হচ্ছে বৈমানিকদের।

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানানোর পরও তা কাটতে কোনো ধরনের সিধান্ত হয়নি। তাতে বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন অবতরণের প্রশ্ন থেকেই গেলো।

এসএইচ