ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাটাই গ্রামের চান্দের গোষ্ঠীর সঙ্গে ছলিম গোষ্ঠীর বিরোধ দীর্ঘদিনের। গত ১৪ মে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় উভয় পক্ষের ঘরবাড়িতে চলে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। হামলা-মামলায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে পুরো নাটাই গ্রাম। অভিযোগ উঠে, পুলিশের নীরবতায় টানা তিনদিন তাণ্ডব চলে। যার ক্ষত এখনও স্পষ্ট।
নাটাই বাসিন্দারা বলেন, ‘পুলিশ আতঙ্ক তৈরি না করলে আর বাধা না দিলে এ সংঘর্ষ আরও আগেই শেষ হয়ে যেত। ঘরবাড়ি পোড়ার পরেও জানালা, গ্রিল খুলে নিয়ে যাচ্ছে সব।’
তবে শুধু নাটাই নয়, অপরাধ বেড়েছে জেলার সর্বত্রই। বিশেষ করে চুরি, ডাকাতির ঘটনায় শহরের বাসাবাড়িতে আতঙ্ক বাড়ছে। দিনের আলোয় ছিনতাইয়ের ঘটনায় নির্বিঘ্নে চলাফেরায় বাড়াচ্ছে উৎকণ্ঠা। গত ২২মে জেলার নাসিরনগরে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে হানা দেয় সশস্ত্র ডাকাত দল। এরপর পহেলা জুলাই সকালে জেলা শহরের পিটিআই স্কুল সংলগ্ন সড়কে রিকশা আটকে ছিনতাইয়ের চিত্র ধরা পড়ে সিসি ক্যামেরায়। একই জায়গায় ২৯ এপ্রিল পথচারীকে বেদম পিটিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয় ছিনতাইকারীরা।
চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির খুনের ঘটনাও বেড়েছে। পুলিশের তথ্য বলছে, গেল ৬ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১১টি ছিনতাই, ৭৫টি চুরি, ৩৬২টি পারিবারিক ও গোষ্ঠিগত দাঙ্গা, ৯টি ডাকাতি এবং খুনের ঘটনায় মামলা হয় ৩৩টি। মূলত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে জেলার আইনশৃঙ্খলা। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবারও বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা। এ সব ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে জনমনে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে রাত বিরাতে চলাচল করা গেলেও এখন আর আগের মত চলাচল করা সম্ভব হয় না। ছিনতাই, রাহাজানি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ আগের তুলনায় এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। এলাকাবাসীর দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন আরও তৎপর হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।
তবে জেলাবাসীর এসব অভিযোগ মানতে নারাজ জেলা পুলিশ সুপার। তিনি বলছেন, পুলিশি তৎপরতায় সন্তোষজনক আছে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে আমার ভালোই মনে হচ্ছে। কারণ ৫ আগস্টের মৃত্যুকুপ থেকে আমরা ওঠে এসেছি। আমাদের জেলা আমাদের কন্ট্রোলেই আছেই।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক। তবে শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা তার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সারাদেশেই অবনতি ঘটেছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। যেমন এ জেলাতেই গত এক মাসে ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে আমাদের বাহিনীগুলো কিন্তু খুবই সক্রিয়। বেশিরভাগ খুনগুলো হয়েছে পারিবারিক কারণে।’
জেলায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো অপরাধমূলক ঘটনা। জননিরাপত্তা নিশ্চিতে অপরাধপ্রবণ এলাকায় পুলিশি তৎপরতা ও নজরদারি বাড়ানোর দাবি জেলাবাসীর।