আটটি স্থানে ধস, মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় পরিকল্পনায় টেকসই সি-ওয়াল

কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে ভাঙন, চলছে মেরামত কাজ
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে ভাঙন, চলছে মেরামত কাজ | ছবি: এখন টিভি
0

তিন বছর ধরে ভাঙনের কবলে কক্সবাজার-টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকা। চলতি মৌসুমে ৮টি স্পটে ভেঙে গেছে আড়াই কিলোমিটার অংশ। যাতে মেরিন ড্রাইভ ঘেঁষা গ্রামবাসীর মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। প্রতি বছর জিও ব্যাগ ফেলা ও মাটি ভরাটসহ নানা সংস্কার কার্যক্রম চালানো হলেও নেই স্থায়ী সমাধান। সাগরের উত্তাল ঢেউ ও নৌকা রাখা-ই ভাঙনের মূল কারণ, বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পর্যটনের আকর্ষণীয় এ এলাকা রক্ষা এবং সড়ক যোগাযোগ টিকিয়ে রাখতে এবার পরিকল্পনা হচ্ছে টেকসই সি-ওয়াল নির্মাণের।

কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ লাগোয়া গ্রাম হাদুরছড়া, যেখানে ১০ বছর ধরে একটি ছোট্ট কুড়ে ঘরে নানা প্রাকৃতিক বৈরীতা সঙ্গী করে বসবাস রুবিনা আখতারদের। অল্প আয়ের সংসারে বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘম রাত কাটে তাদের।

রুবিনা আকতার বলেন, ‘ভয় লাগে, বাসায় পানি ঢুকে মরে যাবো সে ভয়ে থাকি সবসময়। কারণ ঘর ভেঙে গেলে আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।’

বর্ষা এলেই আতঙ্কে দিন কাটে মেরিন ড্রাইভের সাবরাং জিরো পয়েন্ট থেকে উত্তর দিকে মুন্ডারডেইল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশের বাসিন্দাদের। গেলো ৩ বছর ধরে বর্ষায় ভাঙছে মেরিন ড্রাইভ। এতে অতীতে লোকালয়ের বড় ক্ষতি না হলেও যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ ও বসতি হারানোর আশঙ্কায় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর বর্ষা এলেই মেরিন ড্রাইভের এ রোড ভেঙে যায়। এসময় তারা আতঙ্কে দিন কাটায়।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন দেখা দিলেই জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

এবারও মেরিন ড্রাইভের প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশে ভাঙন ঠেকাতে ৫ স্তরের জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪৭ হাজার বর্গমিটার এলাকায় জিও ব্যাগ বসানোর পাশাপাশি ভরাট করা হচ্ছে মাটি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাস্তার পাশে বিপদজনকভাবে জেলেদের নৌকা রাখা ও সাগরের উত্তাল ঢেউ মেরিন ড্রাইভ অংশে ভাঙনের মূল কারণ।

এমন প্রেক্ষাপটে নৌকাগুলো মেরিনড্রাইভ থেকে সরিয়ে অন্যত্র রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সাবরাং অংশের আড়াই কিলোমিটারে টেকসই সি-ওয়াল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানান কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মহসিনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাস্তার পাশে সমুদ্রের পাড়ে যে নৌকাগুলো রাখা আছে, এগুলো বিপদজনকভাবে আছে। এগুলো রাখার কারণে এর আশপাশের মাটি আনস্টেবল হয়ে যাচ্ছে এবং ওভারলোডের কারণে এখানকার মাটি যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে। তবে আমরা খুব শিগগিরই এ রাস্তা মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করবো।’

মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভাঙন রোধে গত বছর ‘কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক চওড়াকরণ’ প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক বিভাগ।

প্রথম ধাপে ১ হাজার ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে উখিয়া উপজেলার পাটুয়ারটেক পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। যেখানে আড়াই কিলোমিটার অংশে নির্মাণ করা হচ্ছে সি-ওয়াল।

এসএইচ