মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ গেড়িলা যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পেড়িয়ে বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত ‘কাদেরিয়া বাহিনী’র বীরত্বের কথা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পরপরই দেশকে শত্রুমুক্ত করতে টাঙ্গাইলে স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ গঠন করা হয়। চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। ২৬ মার্চ গণমুক্তি পরিষদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল সদর থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ানো হয়।
আরও পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে ২৭ মার্চ বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় টাঙ্গাইলকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। ওইদিন রাতেই সার্কিট হাউজ আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। অতর্কিত ওই আক্রমণে দুইজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় ও ১৫০ জন আত্মসমর্পন করে।
প্রথম আক্রমণে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। এরপর থেকে গ্রামে গ্রামে যুবকরা সংগঠিত হতে থাকে। টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে যাওয়ায় ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে প্রবেশের চেষ্টা করে পাকবাহিনী। এসময় মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধারা পাক-হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এরপর হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করলে নিরাপদ স্থানে চলে যায় মুক্তিযোদ্ধারা এবং নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ ও সংগঠিত হতে থাকেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়। সখীপুর উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকা বহেড়াতৈলে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী গঠন করা হয়। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে একের পর এক যুদ্ধ। চারদিকের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী।
১০ ডিসেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের উত্তরে কালিহাতী উপজেলার পৌঁছালে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রায় দুই হাজার ছত্রাসেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়ে। তারা ঢাকার দিকে ছুটতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর রাতেই টাঙ্গাইল থানা দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
১১ ডিসেম্বর ভোর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বীর বেশে শহরে প্রবেশ করতে থাকে এবং শহর নিজেদের দখলে নিয়ে হানাদারদের ধরতে থাকেন। এভাবেই টাঙ্গাইল শহর সম্পূর্ণ হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তির স্বাদ পেয়ে উল্লাসিত মানুষ রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। মুক্তির স্বাদ পেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলে জেলা শহর।
এদিকে, টাঙ্গাইল পাক হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম, বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীর প্রতিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর বীর প্রতিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বীর প্রতিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী আফরাফ হুমায়ুন বাঙালী, বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক বীর প্রতিক প্রমুখ।





