নাওডোবার ওছিমউদ্দিন মাদবরকান্দি গ্রামের জয়নব বেগম। স্বামীকে হারিয়েছেন ৪০ বছর আগে। দুই সন্তানকে বড় করার পাশাপাশি তৈরি করেছিলেন একটি বসত ঘর। আশা আর স্বপ্ন নিয়েই সেই ঘরে বসবাস করতেন তিনি। কিন্তু সোমবারের আকস্মিক পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে তার ঘরটি নিমিষেই বিলীন হয়ে যায়। জীবনের অর্জিত সবকিছুই গ্রাস করেছে আগ্রাসী পদ্মা। আশ্রয়ের সন্ধানে দিশেহারা জয়নব বেগম।
জয়নব বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে নিজে নিজে ঘর বানিয়েছিলাম। অথচ পদ্মা নদীর ভাঙনে পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর।’
জয়নব বেগমের মতো গতকালের ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছেন অন্তত ২৬ টি পরিবার। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে পদ্মা পাড়ে তাদের আহাজারি। ভাঙনের ক্ষত ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের অবশিষ্ট সম্পদটুকু। ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি আর সহায়সম্বল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ।
ভাঙন কবলিত মানুষ সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগসহ দাবি জানিয়েছেন স্থায়ী বাঁধের। তারা জানান, নদী পাড়ের ঘরবাড়ি পানির নিচে চলে গিয়েছে। অন্যের আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে এখন তাদের। প্রশাসন থেকে জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া আর কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই বলেও জানান তারা। এ সময় নদীতে স্থায়ী বাঁধের দাবি জানান তারা।
মাঝির ঘাটের এই বাজারে সব ধরনের ব্যবসায়িক দোকান রয়েছে। বাজারে ভাঙন হানা দেয়ায় নির্ঘুম রাত কাটছে ব্যবসায়ীদের। এরইমধ্যে অনেকেই সরিয়ে নিয়েছেন দোকানের মালামাল। দোকান ঘর ভেঙে অন্যত্র কোথায় যাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। জরুরি ভিত্তিতে বাজার রক্ষার দাবী ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানের বেশিরভাগ জিনিস সরিয়ে নিয়েছেন তারা। যেগুলো বাকি আছে সেগুলো সরিয়ে নিয়ে দোকান ভেঙে দিবেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণেই এ ভাঙন। ভাঙন কবলিতদের অর্থ আর শুকনো খাবার নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘নদী ভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মাঝে গতকাল রাতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আজকে আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি, টিন বিতরণ করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আমরা এখানে প্রায় দেড়শো জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে, আরও চারশো ব্যাগ তৈরি আছে।’
শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ওয়াহিদ হোসেন বলেন, ‘স্রোতের কারণেই মূলত এ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল থেকেই ভাঙন শুরু হয়। গতকাল রাতে আমরা ডাম্পিং শুরু করতে পারিনি, আজকে আমরা এরইমধ্যে ডাম্পিং শুরু করেছি।’
সোমবার বিকেলে পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার এলাকা আকস্মিকভাবে ধসে যায়। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত ঘরসহ ২৬টি স্থাপনা নিমিষেই পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।