কমপ্লিট শাটডাউনে অচল ভোমরা বন্দর: দুর্ভোগে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা

ডেপুটি সহকারী কমিশনার এর কার্যালয়, খুলনা
ডেপুটি সহকারী কমিশনার এর কার্যালয়, খুলনা | ছবি: এখন টিভি
0

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও সংস্কার ইস্যুতে চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ২য় দিনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম স্থলবন্দর সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর। এতে বন্দরে আটকা পড়েছে অন্তত দুই শতাধিক রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক। অপরদিকে ভারতীয় ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে আটকে আছে চারশোর বেশি আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে বসে আছেন। প্রতিদিন বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ।

শুল্ক ও কর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে শনিবার (২৮ জুন) থেকে ভোমরা বন্দরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে দেশজুড়ে এই শাটডাউন পালিত হচ্ছে। ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও চালু আছে। তবে জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এ কর্মসূচির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতে আজ (রোববার, ২৯ জুন) সকাল থেকে ভোমরা স্থল বন্দর কাস্টমস হাউজের প্রধান ফটক বন্ধ রয়েছে। ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দেখা পাওয়া যায়নি।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, ‘আগে থেকেই আমাদের আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ সীমিত। তার উপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অফিস বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছি। শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে, ট্রাক প্রতি ডেমারেজ দিতে হচ্ছে প্রতিদিন। পুরো বন্দরের কার্যক্রম থমকে গেছে।’

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম মিলন বলেন, ‘কাস্টমস অফিস বন্ধ থাকায় আমদানি ও রপ্তানির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শুধু ব্যবসায়ী বা ট্রাক মালিকরাই না, আমাদের মতো সিএন্ডএফ কর্মচারীরাও চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছি। প্রতিদিন বন্দর এলাকায় পাঁচ শতাধিক কর্মচারী কাজ করেন। এখন কাজ নেই, আয় নেই। পরিবার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান দরকার।’

ভোমরা বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্দর বন্ধ থাকায় শত শত শ্রমিক এখন কাজ ছাড়া বসে আছে। দিনমজুর হিসেবে কাজ করি, কাজ না থাকলে পেট চালানোই দায় হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সরকার ও কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে শ্রমিকদের পরিবারগুলো না খেয়ে থাকবে।’

ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. রাসেল বলেন, ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে রাজস্ব প্রশাসনে দীর্ঘদিনের বৈষম্য, কাঠামোগত অসংগতি ও পদোন্নতির অনিয়মের বিরুদ্ধে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তিনি। ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত এলে কার্যক্রম শুরু করবেন তারা।’

ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়ে থাকে। এ বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায়ও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, শুল্ক কর্মকর্তাদের এই কর্মসূচির ফলে সীমান্ত বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সমাধান না এলে এ অচলাবস্থা দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ইএ