ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বৈশ্বিক মন্দা ও কোভিডের ধাক্কায় গেল কয়েক বছরে জাহাজ রপ্তানিতে থমকে যায়। আগের দেয়া ক্রয়াদেশ ফিরিয়ে নেয় অনেক ক্রেতা। এতে চরম সংকটে পড়েন দেশিয় জাহাজ নির্মাতারা।
তবে এই খাতে আবারও ফিরছে সুদিন। কার্বনমুক্ত নিরাপদ নৌ চলাচলের জন্য পুরানো সব জাহাজ স্ক্র্যাপ করতে হচ্ছে জাহাজ মালিকদের। তাই বেড়েছে চাহিদা, দীর্ঘ চার বছর পর আবার রপ্তানির ধারায় ফিরে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। গেল ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিংওয়ানের কাছে রায়ান নামে একটি ফেরি শিপ রপ্তানি করে। প্রতিষ্ঠানটির সাথে প্রায় সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলারের আটটি জাহাজ রপ্তানির চুক্তি করে ওয়েস্টার্ন মেরিন। এর মধ্যে ৬৫ ও ৮০ টন ধারণক্ষমতার দুটি শক্তিশালী টাগ বোট রপ্তানির জন্য হস্তান্তর করা হলো বৃহস্পতিবার। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইইউ দূতাবাসের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতের উন্নয়নে সরকার ২০২১ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে প্রতিযোগী দেশ ভারত, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম থেকে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান বলেন, ‘ব্যাংক একটা স্পেশাল শিপ বিল্ডিং ফান্ড ক্রিয়েট করেছে গত কয়েক বছর আগে। বলেছে, এখন দুই হাজার কোটি টাকায় আমরা আছি, দরকার হলে এটা আমরা পাঁচ হাজার কোটি টাকা করবো, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছে। দুর্ভাগ্যবশত ওখান থেকে এক টাকাও কেউ দিতে পারেনি।’
নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‘স্কিল ওয়ার্কমেন্টশিপ আছে এবং মেরিন ব্যাকগ্রাউন্ডের আমাদের যে অভিজ্ঞতা আছে শিপ বিল্ডিং রিপেয়ারে, সেটা আমাদের জন্য প্লাসপয়েন্ট। মাঝখানে ফাইন্যান্স এবং বিভিন্ন কারণে এই জিনিসটা একটু ধীরগতি হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার ওয়েস্টার্ন মেরিনের এই আটটি জাহাজ উনারা যে ইউএই এর জন্য নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে একটি চলে গিয়েছে।’
বিশ্বে বর্তমানে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বাজার প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের। এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘১৭ বছরে আমাদের অর্জন হচ্ছে মাত্র ২০০০ মিলিয়ন ডলার। সেখানে আমরা বলছি প্রতিবছর দুই বিলিয়ন ডলারের কথা। তাহলে আমরা কত পিছিয়ে আছি। পিছিয়ে থাকার তো অনেকগুলো কারণ আছে। এখানে তো ইনভেস্টমেন্ট হয়নি। বিনিয়োগবান্ধব নীতি তৈরি করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে এটা অন্তর্বর্তী সরকার। এটা একটা অস্থায়ী সরকার, একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা এসেছি।’
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ প্রায় ৫০টি জাহাজ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ওয়েস্টান মেরিন এককভাবে ৩৪টি জাহাজ রপ্তানি করে ১৩৭ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে।