চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ছে রেকর্ড জাহাজ; পণ্য খালাসে স্থবিরতা

চট্টগ্রাম বন্দরের একটি অংশ
চট্টগ্রাম বন্দরের একটি অংশ | ছবি: সংগৃহীত
0

চলতি বছরের সাত মাসে গত বছরের চেয়ে ২৩৪টি বেশি জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে। সেই সঙ্গে বেড়েছে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং। তবে বৈরি আবহাওয়া, ধর্মঘট ও কাস্টম কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিসহ নানা সমস্যায় পণ্য খালাস ব্যাহত হওয়ায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বন্দরকে। সংকট নিরসনে এবার খালি কন্টেইনারের ওপর চারগুণ স্টোর রেন্ট আরোপের কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বাড়ায় ফিডার জাহাজের সংখ্যা কমাতেও নোটিশ দেয়া হয়েছে। তবে ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও বেসরকারি আইসিডিগুলোর সক্ষমতা না বাড়ালে আগামী দিনে সংকট বাড়বে।

এক বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের চিত্র। ডলার সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় গেল বছর অনেক সময় খালি থাকতো বন্দরের জেটি। বন্দরের বহিনোঙরে আসার দু-এক দিনের মধ্যেই জেটিতে ভিড়তে পারতো জাহাজ। অথচ এখন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে গড়ে সাত থেকে ১০ দিন। কনটেইনার ও কার্গো মিলিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২২টি জাহাজ বহিনোঙরে অপেক্ষায় থাকছে।

হিসেব অনুযায়ী, গেল বছরের চেয়ে এ বছরে ২৩৪টি জাহাজ বেশি এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বেড়েছে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং। কিন্ত সে হারে খালাসের গতি না বাড়ায় গড়ে ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার একক। পণ্য ওঠানামায় সময় বেশি লাগায় বাড়ছে জেটিতে জাহাজের অবস্থানকাল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সবমিলিয়ে আমরা চাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে। আমরা আমদানি-রপ্তানিকারকদের সবসময় বলি, সরকারি বন্ধের দিনগুলো সেগুলোতেও যদি সমানভাবে সবাই ডেলিভারি নেয় তাহলে বন্দরে এ অবস্থা তৈরি হয় না।’

যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত পাল্টা শুল্ক এড়াতে জুলাই মাসে রপ্তানি কনটেইনার বাড়লে চাপে পড়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দরের আসা জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা ও খালি কনটেইনার দ্রুত না নিলে চারগুণ জরিমানা আরোপের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে নোটিশ দেয় বন্দর।

শিপিং এজেন্টরা বলছেন, বাড়তি চাপ সামাল দিতে পতেঙ্গা কনটেইনারের টার্মিনাল পুরোদমে চালু ও বিভিন্ন জেটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পাশাপাশি দ্রুত বে-টার্মিনাল নির্মাণ জরুরি।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ টার্মিনালটা আমরা ব্যবহারে আনতে পারছি না। যেখানে আমার এখানে ক্রাইসিস যাচ্ছে সেখানে জেটি খালি যাচ্ছে। এটাকে ফুল অপারেশনে এসে তিনটা জাহাজ যদি অ্যাকোমোডেট করতে পারি তাহলে তো এ সমস্যা এমনিই সমাধান হয়ে যাবে। জাহাজ কমিয়ে সমাধান করতে হবে না।’

কনটেইনার ডিপো পরিচালনাকারীরা বলছে, সংকটের স্থায়ী সমাধানে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সহজ শর্তে ডিপো নির্মাণের সুযোগ দিতে হবে।

কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বিপ্লব বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো ঢেলে সাজানোর বিষয় রয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যে রপ্তানি পণ্য আমরা পাঠাচ্ছি সেগুলো প্রি স্টেকিংয়ের জায়গা করে দিতে হবে। সে জায়গা করতে গেলেই আমদানি পণ্যের ডেলিভারি বন্দর থেকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে। এটা রাতারাতি করা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, বেসরকারি এসেটের সংখ্যা এবং সক্ষমতা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে একটা সময় চট্টগ্রাম বন্দরের সকল আমদানি পণ্যের ডেলিভারি কিন্তু বাইরে নিয়ে যেতে হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৪৮ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড সবোর্চ্চ ৩২ লাখ ৯৬ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। সমীক্ষার তথ্যমতে ২০৩০ সালে হ্যান্ডলিং দাঁড়াবে প্রায় পাঁচ মিলিয়নে।

ইএ