২০০২ সালে বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। এরপর থেকে গত ২৩ বছরেও নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করতে পারেনি বরিশাল সিটি করপোরেশন।
তবে দিন দিন সুপেয় পানির চাহিদা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন পানির চাহিদা পূরণ করতে না পারায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভূগর্ভস্থ পানি উঠাতে গভীর নলকূপ বসিয়েছেন অনেক নগরবাসী। সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগের তথ্য মতে, মহানগরীতে ব্যক্তিগত গভীর নলকূপের সংখ্যা ২৭ হাজার ৯২৩টি। এছাড়া সিটি করপোরেশনের নলকূপ আছে আরও ৩৮টি। শুধু মাত্র গভীর নলকূপ দিয়েই পানি উত্তোলন হয় দৈনিক ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার। তবে ব্যক্তিগত নলকূপে কি পরিমাণ পানি উঠানো হয় তার কোনো পরিসংখ্যান মেলেনি। এভাবে পানি উত্তোলনের ফলে গত চার বছরে বরিশালের মাটি চার সেন্টিমিটার দেবে গেছে বলে জানিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার বলেন, ‘বৃষ্টি বেশি হওয়াতে আন্ডারগ্রাউন্ডে পানি রিচার্জ হয়েছে। এভাবে আমরা যদি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ করতে পারি তাহলে বরিশালে মাটি দেবে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি বন্ধ হবে।’
মহানগরীতে জনসংখ্যা বাড়ায় পানির চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়েই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ বেড়েছে। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় ভূগর্ভের উত্তোলন করা পানির সেই স্থান দখল করছে লবণাক্ত পানি। এতে মানব দেহ লবণাক্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্থানীয় কৃষিতেও।
আরও পড়ুন:
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়োলজি এন্ড মাইনিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রিসালাত রফিক বলেন, ‘ভূগর্ভের পানি অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। যেহেতু বরিশাল উপকূলীয় এলাকা তাই লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এটি কৃষি কাজের জন্য নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জ্যোতির্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘এ অবাধ উত্তোলন বন্ধ করার জন্য ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি যৌথ সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়ছে।’
ভূগর্ভস্থ পানি উঠানোর ফলে বরিশাল নগরীর মাটি দেবে যাওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন খোদ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকও। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প উপায়ে পানি উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক রায়হান কাওছার বলেন, ‘এ ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে সরকার আমাদের বিভিন্ন কাজের জন্য ১০ কোটি টাকা দিয়েছিলো। সেই টাকার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ওয়াটার প্লান্ট রিভাইব করার জন্য কাজে লাগানো হয়েছে। এ দুটি চালু হলে আমরা ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ কোটি লিটার পানি ট্রিটমেন্ট করে জনগণকে দিতে পারব। ফলে আন্ডারগ্রাউন্ডের পানি ব্যবহার করতে হবেনা। এতে মাটি দেবে যাওয়ার সমস্যা আর হবে না।’
বরিশাল নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা ৭ কোটি ২০ লাখ লিটার। ঘাটতি ৪ কোটি লিটার। সিটি কর্পোরেশনের এলাকার ৫৮ বর্গ কিলোমিটারে বসবাস করেছেন প্রায় ৮ লাখ বাসিন্দা।





