সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫০৮ জন। যার মধ্যে ২ হাজার ২০৫ জনই রোহিঙ্গা, আর স্থানীয় ৩০৩ জন। শুধু জুন মাসেই আক্রান্ত ৮৫৬ জন। তবে, ডেঙ্গুতে এখনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও ম্যালেরিয়ায় জুন মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন। এর মধ্যে ৫ জন রোহিঙ্গা, ১ জন স্থানীয়। এরা সবাই পাহাড়ি এলাকা ঘুরে এসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ম্যালেরিয়ায় গত ৬ মাসে আক্রান্ত হন ৪৩১ জন। আর শুধু জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ২১৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ২০০ জনই বান্দরবান, রাঙামাটি কিংবা নাইক্ষ্যংছড়িসহ পাহাড়ি এলাকা থেকে কাজ করে বা ভ্রমণে গিয়ে ফিরে এসেছেন।
রোগীরা জানান, জ্বর একবার এসে ভালো হয়ে আবার জ্বর আসে। ভর্তি হতে আসা আরেকজন জানান, তিনি তার বাচ্চাকে ভর্তি করতে নিয়ে এসেছেন। এর আগেও একবার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছিলেন। জ্বর ভালো না হওয়ায় আবার বাচ্চাকে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছেন।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘গত দুই বছরের তুলনায় এই মাসে আমাদের ম্যালেরিয়া রোগী বেশি ধরা পড়ছে। কিন্তু এই কেসগুলো কক্সবাজারের নিজস্ব না। এরা সবাই বাইরে কাজ করতে যায়, সেখান থেকেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আসছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা বান্দরবান খুবই ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলা। ওখানে গেলেই মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দারা তো ম্যালেরিয়া সম্পর্কে সচেতন। একটু জ্বর হলেই তারা ডাক্তার দেখায়। কিন্তু আমাদের এখানকার লোকেরা ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে দুই দিন অপেক্ষা করে। এই দুই দিনেই ম্যালেরিয়া চরম আকার ধারণ করে।’
ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ভয়াবহতা যখন বাড়ছে ঠিক তখনি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা আতঙ্ক। বর্তমানে জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ১৬ জন করোনা রোগী, যার ১১ জন রোহিঙ্গা, ৫ জন স্থানীয়। এদের সবার চিকিৎসা চলছে নিজ নিজ বাড়িতে, তবে আপাতত প্রস্তুত রাখা হয়েছে সদর হাসপাতালের ৬টি কেবিন। করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গঠন করা হয়েছে ৯ সদস্যের রেড টিম। স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, মশা নিয়ন্ত্রণে মশারি বিতরণ, সচেতনতামূলক প্রচার ও ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জনসচেতনতা সৃষ্টি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, ‘এখানে এখনও পর্যন্ত কোন রোগী আসেনি চিকিৎসা নিতে। কিন্তু যেহেতু করোনার প্রকোপ বাড়ছে তাই আমরা আমাদের সদর হাসপাতালে প্রস্তুতি হিসেবে ৬ টি বেড কেবিন হিসেবে সংরক্ষিত রেখেছি। ৯ সদস্য বিশিষ্ট সিনিয়র কনসালটেন্টসহ একটি টিম রেডি করা হয়েছে। কেউ করোনা সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে আসলে সেই চিকিৎসার জন্য টিম করা হয়েছে। স্যাম্পল কালেকশনের জন্য ফ্লু কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’