গ্রীষ্মের যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, তখনই বৃষ্টি নামিয়ে আনে স্বস্তি। তবে এই বর্ষা যতটা স্বস্তি দেয়, ততটাই বিপদ ডেকে আনে রাজধানীবাসীর জন্য। রাস্তার পাশে কিংবা বাড়ির ছাদ বাগানের টবে জমে থাকা পানি হয়ে ওঠে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র।
বর্ষার মৌসুম মানেই রাজধানীতে ডেঙ্গুর দাপট। আগস্টের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে সাড়ে তিন হাজারের ঘর, আর মারা গেছেন অন্তত ১৯ জন। রাজধানীতে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর ভিড় বাড়ছে। শয্যা সংকটের কারণে অনেককে করিডোরে বা অতিরিক্ত বেডে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে আসা অধিকাংশ রোগীই দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা। তাদের অনেকে জ্বর, শরীরে ব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। যদিও পরিস্থিতি আগের মতো আশঙ্কাজনক নয়।
আরও পড়ুন:
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তুলনামূলক ঘনবসতিপূর্ণ এবং এটা পুরনো। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা উত্তরের তুলনায় পুরনো। বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে ডেঙ্গু যে পরিমাণে বেড়েছে এ বছর কিন্তু সে পরিমাণে বাড়তে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে এলাকায় সময়মতো মশা নিধনের কার্যক্রম চোখে পড়ে না বলে অভিযোগ রোগীদের। অনেকে বলছেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়, ফলে মশার প্রজনন স্থল অল্প সময়েই তৈরি হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে তাদের।
রোগীরা জানান, এখানে ঠিকমতো ডাক্তার বা নার্স কেউ আসে না। রোগীর তুলনায় ডাক্তার কম। পরিবেশ পরিষ্কার করা হয় না। শুধু সিটি কর্পোরেশনের দায় নয়, এডিস মশা সম্পূর্ণ নিধনে সব পর্যায় থেকে সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. নিশাত পারভীন। তবে এডিস মশা নিধনে সর্বোচ্চ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘আগস্ট মাসে প্রতিটা জোনে একটা করে মনিটরিং টিম করা হয়েছে। যারা কাজ করছে তারা তো করছেই। তাদের বাইরে একটা মনিটরিং টিম করা হয়েছে যাতে সবাই কাজ করে। একেকদিন আমরা একেকটা উদ্যোগ নিই। কালকে আমরা শুনেছি পুলিশের যে জায়গাগুলো আছে সেখানে মশা বেশি, এবং সেখানে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এজন্য আজকে আমরা দক্ষিণ সিটির সব থানায় কার্যক্রম হচ্ছে। কখনো আবার আমরা স্কুলে প্রোগ্রাম করছি। এভাবে আমরা কাজ করছি। শুধু একা কাজ না করলে সবাই মিলে কাজ করতে হবে, তাহলেই সম্ভব।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু থেকে দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৪০০ এর বেশি রোগী, মারা গেছেন ৪০ জনের বেশি। যেখানে উত্তর সিটিতে মৃত্যু সংখ্যা ১০ জনের কাছাকাছি।