ইরানে মার্কিন হামলায় অস্থিতিশীল বিশ্ব জ্বালানি বাজার

হরমুজ প্রণালী
হরমুজ প্রণালী | ছবি: সংগৃহীত
0

হরমুজ প্রণালী চালু রাখতে চীনের দারস্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। ইরানে মার্কিন হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজার। গেল পাঁচ মাসে দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ। এশিয়ার শেয়ার বাজারেও ব্যাপক দরপতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাময়িক সময়ের জন্য বিরূপ প্রভাব পড়লেও, পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বিশ্বের প্রায় ২৫ শতাংশ তেল এবং ২০ শতাংশ গ্যাস পরিবহণ হয় এই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালী দিয়ে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পারস্য ও ওমান উপসাগরের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী হরমুজ প্রণালী। প্রণালীটি দৈর্ঘ্যে ৩৩ এবং প্রস্থে ৩ কিলোমিটার। তেল সমৃদ্ধ পারস্য উপসাগর থেকে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে অপরিশোধিত তেল পরিবহনের একমাত্র পথ এটি। যার উত্তর দিক ইরানের নিয়ন্ত্রণে।

মার্কিন জ্বালানি তথ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল এই প্রণালী দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা প্রতিদিন বৈশ্বিক তেল উৎপাদনের পাঁচ ভাগের এক অংশ। এছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের ২০ শতাংশ পরিবহন হয় এই রুট দিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হরমুজ প্রণালীর বিকল্প নেই।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তেহরান। এর প্রভাবে এরইমধ্যে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজার। গেল পাঁচ মাসে তেলের দাম সর্বোচ্চ তিন শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৭৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ওপেকের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান। বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের তিন শতাংশই ইরানের।

আরো পড়ুন:

কেবল তেলের বাজারে অস্থিরতা নয়, ধস নেমেছে শেয়ার বাজারেও। মার্কিন শেয়ার বাজারের প্রধান তিন সূচক গড়ে চার শতাংশ হারে কমেছে। দরপতন হয়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজারেও। চীন, জাপান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে পতনের দিকে শেয়ারের দর।

এশিয়ার জ্বালানি-নির্ভর দেশগুলো তেলের দাম নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এরইমধ্যে বিকল্প রুটে তেল আমদানির কথা ভাবছে ভারত। এদিকে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশগুলোর বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা থাকায় কিছুটা চিন্তামুক্ত তারা। হরমুজ প্রণালী বন্ধের প্রভাব সাময়িক পড়লেও, আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।

অস্ট্রেলিয়ান ট্রেড কমিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ টিম হারকোর্ট বলেন, ‘হরমুজ প্রণালী বন্ধের প্রভাব সাময়িক হবে। কারণ জাহাজ কোম্পানিগুলো তাদের বিকল্প পথ বেছে নিতে পারে। গেল দেড় বছর যাবত বিভিন্ন সময় সমুদ্র পথে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে হামলা হয়েছে। তার প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে। তবে জাহাজ চলাচল একেবারে বন্ধ করে দিলে তা হবে আত্মঘাতী পদক্ষেপ।’

আরো পড়ুন:

ভারতের জ্বালানিমন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা অপ্রত্যাশিত ছিল না। এই উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে পূর্বাভাস ছিল। ভারত সরকার ধারাবাহিকভাবে এবং পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আসছে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টিও চিন্তা করছে ভারত।’

এমন অবস্থায় হরমুজ প্রণালী চালু রাখতে চীনের সহায়তা চেয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ইরানের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। তেহরানের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ। ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রুবিও বলেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত হবে অর্থনৈতিক আত্মহত্যা।

গেল রোববার ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরাইল সংঘাতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলে ট্রাম্প প্রশাসন।

এসএস