একের পর এক নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার মধ্যে অন্যতম মার্কিন শুল্কনীতি। শুল্ক ধার্য করার পেছনে ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য ছিল অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, মার্কিন পণ্যের বিকাশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা। শুল্কহার কমানোর বিপরীতে বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাজারে মার্কিন পণ্যের প্রবেশাধিকার অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন তিনি। যা তার পরিকল্পনার বড় লক্ষ্য অর্জন।
এরইমধ্যে ১৫ শতাংশ শুল্কহারে জাপানের সঙ্গে চুক্তি শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিময়ে জাপানের কাছ থেকে আদায় করেছেন ৫৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ। এছাড়া বিনা শুল্কে জাপানের বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশাধিকা নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, এতে দুই দেশের ৭ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে অনেকাংশে।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও শুল্ক হ্রাস করে চুক্তি সম্পন্ন করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্য প্রতি বছর এক লাখ পর্যন্ত গাড়ি মাত্র ১০ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে পারবে। যা আগে ছিল সাড়ে ২৭ শতাংশ। এছাড়া, ব্রিটিশ মহাকাশ শিল্পের ওপর আরোপিত সব আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির খসড়া করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনোকিছু চূড়ান্ত না হলেও, এসব দেশের ওপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, এসব দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের দাবি জানিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে এখন পর্যন্ত চুক্তি সম্পন্ন হওয়া দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ছোট বাণিজ্যিক অংশীদার।
তবে শুল্কনীতির সবচেয়ে বড় দুই অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনকে এখনো বাগে আনতে পারেননি ট্রাম্প। পহেলা আগস্টের মধ্যেই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে মরিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে জোটটি বলছে, যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রেই ইউরোপের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। এ বিষয়ে সমঝোতা না হলে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্কারোপের হুমকিও দিয়ে রেখেছে ইইউ। জোটের নেতারাও এ বিষয়ে একমত।
বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় চীনের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। একটি কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে এরইমধ্যে বিকল্প বাজারের সন্ধান করছে বেইজিং। তাদের অন্যতম লক্ষ্য ইউরোপের বাজার।
ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। তবে দেশটির সঙ্গে ৩৫৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ইইউ। ইউরোপ স্পষ্ট করেছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন নয়, বরং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য অনিশ্চয়তায় ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে পারে বেইজিংয়ের। যা অনেকটা চাপে ফেলতে পারে ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে।
বিশ্লেষকরা সতর্কবার্তা দিয়েছেন, ইইউসহ বেশিরভাগ দেশের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখলে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হবে। জেপি মরগ্যানের গবেষণার তথ্য বলছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে প্রায় ৮৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হবে মার্কিন অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বাড়বে বেকারত্ব।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ম্যারি লাভলি বলেন, ‘ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে অনিশ্চয়তার দেখা দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক স্থগিতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মজুত পণ্যও শেষ হতে চলেছে। শুল্ক নিয়ে অংশীদারদের সঙ্গে সমঝোতায় না পৌঁছাতে পারলে মূল্য বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং মার্কিন অর্থনীতিও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।’
তবে শুল্ক ইস্যুতে প্রতিবেশি দেশ কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিলের ওপর অনেকটাই কঠোর ট্রাম্প প্রশাসন। আলোচনা করেও ফায়দা পায়নি দেশগুলো। এবার যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য জোরদারের প্রচেষ্টায় আছে তারা।