পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা বাড়াতে পারে ইরান

তেহরান, ইরান
তেহরান, ইরান | ছবি: এখন টিভি
0

ইরানে ইসরাইলের অতর্কিত বিমান হামলায় হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভয় পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছে মতো পারমাণবিক চুক্তিতে রাজি হওয়ার বদলে উল্টো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা কয়েকগুণ বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ দেশটির কাছে রয়েছে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ৪ শ’ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম। যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ করে ৯টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা।

পারমাণবিক চুক্তি ইস্যুতে আলোচনা অব্যাহত রেখেছিলো ইরান-যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক এমন সময় এসে শুক্রবার ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও বেসামরি স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। একদিন না যেতেই পাল্টা হামলা চালিয়ে তেল আবিবকে দাঁতভাঙা জবাব দেয় তেহরান।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে পরমাণু প্রকল্প ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই বলে জানিয়েছে ইরান। কারণ ইসরাইলের অতর্কিত হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী মনে করছে তারা। মিডল ইস্ট আইয়ের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে, হামলার আগে গোপনে ইসরাইলকে প্রায় ৩শটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন আগের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি গতিতে পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রচেষ্টা বাড়াতে পারে ইরান।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী ভায়েজ বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইলি হামলা উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে ইরান পারমাণবিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরো দৃঢ়ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পারমাণবিক কর্মসূচির উন্নয়নে কয়েক দশক ধরে ব্যয় করে যাচ্ছে। এর অর্থ তারা চাইলেই যে কোনো সময় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।

১৯৫৭ সালে ইরানের সাথে যৌথভাবে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করেছ যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ১৯৬০ সাল থেকে পারমাণবিক অবকাঠামো তৈরি করে আসছে ইরান। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কর্মসূচির উন্নয়ন শুরু করে ১৯৭০-এর দশকে। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের সময় সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি। ইউরেনিয়াম দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত একটি প্রক্রিয়া, উচ্চ স্তরের পারমাণবিক বোমা তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করা হয়।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩.৫% থেকে ৫% পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়। আর চলতি বছর সবশেষ দেয়া আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার তথ্য বলছে, ইরানের কাছে ৪শ' কেজির বেশি ইউরেনিয়াম আছে যা ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ। এটি যদি আরও বিশুদ্ধকরণের দিকে আগায়, তবে ৯টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ইরানের খুব একটা সময় লাগবে না।

ইরানের নাতাঞ্জে থাকা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির প্রাণ বলা হয়। সেখানেই শুক্রবার হামলা চালিয়েছে ইসরাইল, তবে কতটা ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ফোরদো, ইসফাহান এবং বুশেহর পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েনি বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ।

ইএ