গাজায় খাদ্য সংকট চরমে, একদিনে আরও ১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশু
গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশু | ছবি: সংগৃহীত
0

অনাহার ও অপুষ্টিতে একদিনে আরও ১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুতে যুদ্ধ শুরুর পর প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ জনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট দুর্ভিক্ষের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করলেও নেতানিয়াহু প্রশাসন দায় চাপাচ্ছে হামাসের ওপর। এদিকে কাতারে যুদ্ধবিরতির জন্য আবারও ইসরাইলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় বসেছে হামাস। ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে প্রস্তাবের জবাব। বুধবার (২৩ জুলাই) দিনভর ইসরাইলের হামলায় উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি।

হাড় আর চামড়ার মধ্যে কোনো মাংস নেই। গাজার শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবার পরিস্থিতি এক। অনাহার ও অপুষ্টিতে প্রতিনিয়ত হাসপাতালে ছুটে আসছেন ফিলিস্তিনিরা। তবে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মীরাও নির্বাক। কারণ তাদের মুখেও জুটছে না একবেলা খাবার।

খাদ্যের অভাবে একদিনে উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১০ ফিলিস্তিনি। চরম অপুষ্টি নিয়ে ক্ষুধার্ত প্রতিটি মানুষ ধীরে ধীরে বেদনাদায়ক মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে। এমনটা জানিয়েছেন গাজার আল জাজিরা প্রতিনিধি। উপত্যকার দুর্ভিক্ষকে মানবসৃষ্ট বলে দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও রেড ক্রিসেন্ট।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম ঘেব্রিয়েসুস বলেন, ‘গাজার বেশিরভাগ মানুষ অনাহারে রয়েছে। আমি জানিনা একে গণ অনাহার ছাড়া কী বলা যায়। এটি মানবসৃষ্ট। ত্রাণ সরবরাহে অবরোধের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি পুরোপুরি পরিষ্কার।’

ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টের মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ বলেন, ‘গাজা যা হচ্ছে, তা প্রাকৃতিক নয়। মানবিক সহায়তা বন্ধ ও ইসরাইলের অবরোধের কারণে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই ভয়াবহ এই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।’

বিশ্ববাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুর্ভিক্ষের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করলেও নেতানিয়াহু প্রশাসন দায় চাপাচ্ছে হামাসের ওপর। সরকারের মুখপাত্রের দাবি, ত্রাণ সহায়তা হাইজ্যাক করে তা গাজাবাসীর কাছে বিক্রি করছে ফিলিস্তিনের গোষ্ঠীটি। উপত্যকায় জাতিসংঘের নেতৃত্বে অবিলম্বে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শুরুর দাবি জানিয়েছে কানাডা। যদিও তা প্রত্যাখান করেছে ইসরাইল। পাশাপাশি জানানো হয়, জাতিসংঘের কর্মীদের ১ মাসের বেশি ভিসা প্রদান করা হবে না।

ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন, ‘বর্তমানে গাজার দুর্ভিক্ষের পেছনে ইসরাইলের হাত নেই। মানবসৃষ্ট এই দুর্যোগটি তৈরি করেছে হামাস। পুরো ঘটনা বলার মতো সময় আসেনি এখনো। দুর্ভোগের কারণ হামাস। এটি অস্বীকারের সুযোগ নেই।’

দুর্ভিক্ষের মধ্যে গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। বুধবার উপত্যকায় দিনভর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি। যার মধ্যে ত্রাণ প্রত্যাশী ছিলেন বেশ কয়েকজন।

এমন পরিস্থিতিতে আড়াই সপ্তাহ পর কাতারে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনায় বসেছে হামাস ও ইসরাইল। ইতোমধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের জবাব পাঠানো হয়েছে তেল আবিবের কাছে। যা পর্যালোচনা করছে নেতানিয়াহু সরকার। এএফপি বলছে, ত্রাণ প্রবেশের স্থান, ইসরাইলি সেনাবাহিনীমুক্ত অঞ্চল ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চয়তার বিষয়ে সংশোধনী দিয়েছে হামাস। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য স্টিভ উইটকফের মধ্যপ্রাচ্য সফরের কথা নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউজ।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘বিশেষ দূত উইটকফ ইউরোপ যাচ্ছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময়ের লক্ষ্যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল আলোচনা হতে যাচ্ছে।’

এদিকে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব আরোপের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে নেসেট। ইসরাইলি পার্লামেন্টের এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।

ইএ