ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ভারতের লোকসভার অধিবেশনে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেন, কাশ্মীরের শ্রীনগরে অভিযান চালিয়ে পেহেলগাম কাণ্ডে জড়িত ৩ হামলাকারীকে হত্যা করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। রাজ্যসভার অধিবেশনে একই দাবি করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
শুরু থেকেই পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে শুরু হওয়া ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে সব দিক থেকে নিজেদের জয়ী বলে দাবি করে আসছিল ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পর লোকসভার অধিবেশনে আবারও একই দৃষ্টিকোণ থেকে আলাপ শুরু করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি দাবি করেন, অপারেশন সিন্দুর বন্ধে ভারতকে অনুরোধ করেননি কোনো সরকার প্রধান। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি নাকচ করে আরও একবার দাবি করেছেন, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যস্ততায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে— যেখানে অবদান ছিল না কোনো তৃতীয় পক্ষের।
এছাড়াও পাকিস্তান থেকে ছোড়া হাজারখানেক মিসাইল ও ড্রোন ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এক হাজার মিসাইল ও ড্রোন ব্যবহার করে ভারতে হামলা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এগুলো ভারতের কোনো স্থানে আঘাত হানলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারতো। কিন্তু আমরা সেগুলো আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছি।’
কিন্তু বিজেপি নেতাদের এমন বক্তব্যকে মোটাদাগে কৃতিত্ব ভাগাভাগির রাজনীতি হিসেবে দেখছেন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতারা। এমনকি যখন অপারেশন সিন্দুর শুরু হয় তখন ভারতীয় রাজনীতিতে যে ঐক্য দেখা গেছে— মঙ্গলবারের লোকসভায় উঠে এসেছে তার উল্টো চিত্র।
কংগ্রেস নেতা ও লোকসভার বিরোধী দলীয় প্রধান রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক অভিযানের আগে বিরোধী শিবিরের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেননি মোদি।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ‘যখন আমরা বলি, আমরা যুদ্ধ আর দীর্ঘায়িত করতে চাই না, এর মানে আমি আর কোনো আঘাতই করবো না। কেন? কারণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ রক্ষা করা।’
যদিও জবাবে রাহুলকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, পেহেলগামে হামলার জবাবে নয়াদিল্লি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যোগ্যতা নেই কংগ্রেস নেতার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছাড়াই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে মোদি প্রশাসনের এ ন্যারেটিভকে চ্যালেঞ্জ করছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও।
লোকসভায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বান উপেক্ষা করার ক্ষমতা নেই নরেন্দ্র মোদির।
পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার জেরে ভারতের অপারেশন সিন্দুরকে নরেন্দ্র মোদির জনসমর্থন আদায়ের একটি কূটনৈতিক চাল হিসেবে আখ্যা দিচ্ছিলো বিজেপি বিরোধীদের একাংশ।
যদিও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এ দ্বৈরথকে জাতীয় গৌরবের পর্যায়ে নিয়ে যায় ভারতের সাধারণ মানুষ। কিন্তু মঙ্গলবারের অধিবেশনে বিরোধীদের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট অপরেশন সিন্দুরের সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়ে দ্বিমত আছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও। এতে করে ইসলামাবাদের প্রতিরোধের সামনে নয়াদিল্লির সাফল্য মলিন হয়ে যাচ্ছে কি না সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।