ঐতিহাসিক হিরোশিমা দিবস আজ

হিরোশিমা
হিরোশিমা | ছবি: সংগৃহীত
0

ঐতিহাসিক হিরোশিমা দিবস আজ। ১৯৪৫ সালের এ দিনে জাপানের হিরোশিমা শহরে ইতিহাসের প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ভয়াবহ ওই ঘটনার ৮০ বছর পরও সেই স্মৃতি মনে করে আজও শিউরে ওঠেন প্রাণে বেঁচে যাওয়া জাপানিরা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এখনও ছুটতে হয় হাসপাতালে। বিশ্বজুড়ে যখন সংঘাত আর রক্তপাতের মহোৎসব, তখনও আরও একটি পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা ভাবিয়ে তোলে তাদের।

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। স্থানীয় সময় সকাল ৮ টা ১৫। জাপানের হিরোশিমা শহরে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

৩ দিন পর বোমা ফেলা হয় জাপানের আরেক শহর নাগাসাকিতে। যুদ্ধের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম পারমাণবিক বোমার ব্যবহার। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কারণেই সেদিন নরকে পরিণত হয় জাপান। উদীয়মান সূর্যের দেশ ঢেকে যায় অন্ধকারে। প্রাণ হারান প্রায় দেড় লাখ মানুষ। পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা অঞ্চলে, যার প্রভাব আজও বিদ্যমান।

আরও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান এই বোমা হামলার নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে জাপান যখন কিছুতেই আত্মসমর্পণে রাজি নয়, ঠিক তখনই ওই বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াশিংটন। এর মধ্য দিয়ে জাপান আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

তাৎক্ষণিক ওই বিস্ফোরণে নিহতদের ২০ শতাংশই ছিলেন কোরীয় বাসিন্দা- যা অনেকের কাছেই অজানা। ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে জাপানি উপনিবেশের অধীনে ছিল কোরিয়া। যখন এই হামলা হয় তখন হিরোশিমায় ছিল ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি কোরীয় নাগরিকের বাস।

দুর্বিষহ সেই দিনের কথা ভেবে এখনও স্থির থাকতে পারেন না ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাওয়া হিরোশিমা-নাগাসাকির বাসিন্দারা। যাদের অনেকে এখনও লড়াই করছেন শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। হামলার সময় দুই শহরের কোনোটিতেই ছিলেন না অথচ এখনও তেজক্রিয়তার প্রভাবে ক্যান্সারে ভুগছেন- এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘ছোট থাকতে আমি শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল ছিলাম। আমার স্ট্রোক হয়। ব্রেইন টিউমারও দেখা দেয়। সম্প্রতি দুইবার স্তন ক্যান্সারের অপারেশনও করতে হয়েছে।’

আরেকজন বলেন, ‘বোমাটা যখন ফেলা হয় তখন আমি এই বাড়িতেই থাকতাম। দেখে মনে হচ্ছে এটা আমারই ছবি। আমাদের মধ্যে আরেকজন প্রাণে বেঁচে যায়। সে এখন টোকিওতে থাকে। বাকিরা কেউ জীবিত নেই।’

বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ক্যান্সারের কারণে ৬ বার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এতবার হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয়েছে যে গুনে শেষ করা যাবে না।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে ঘোষণা করা হয় শান্তির শহর। নির্মাণ করা হয় শান্তি স্মৃতি পার্ক। প্রতিবছরই শোক আর বেদনায় এই দিনটি স্মরণ করে বিশ্ব। সঙ্গে চলে যুদ্ধবিরোধী প্রচারণা।

হিরোশিমা দিবসের ৮০তম বার্ষিকীতে পিস পার্কে আগতদের অনেকেই বলছেন, ওই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি যুক্তরাষ্ট্র। আর যে বোমার কারণে দুই-তিন প্রজন্ম ধরে তীব্র যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই করলো জাপানবাসী, সেই পারমাণবিক ঘাত-প্রতিঘাতের পথে আবারও হাঁটছে বিশ্ব।

বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘আমার কেন জানি না মনে হয়, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে। ইউরোপের দিকে দেখুন। যে কোন সময় তারা আরও ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সংঘাত বন্ধে উদ্যোগ না নেয়, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’

মধ্যপ্রাচ্যে হামাস-ইসরাইল সংঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আর সবশেষ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, বিশ্বব্যাপী সংঘাতের যে জোয়ার বইছে, তাতে আরও একটি পারমাণবিক সংঘাতের সাক্ষী হতে পারে বিশ্ব-এমনটাই আশঙ্কা আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।

সেজু