বিশ্বের চোখ এখন শুক্রবারের (১৫ আগস্ট) আলাস্কা বৈঠকে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৪ বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হবে বলে প্রত্যাশা বিশ্ববাসীর।
তবে শুরুতে ইউক্রেনকে বৈঠকে না রাখায় শুরু হয় সমালোচনা। যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের নেতারা ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বৈঠকে রাখার জোর দাবি জানান।
এতে বলা হয়, মূল অংশীজন ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। এছাড়া মস্কো-কিয়েভের মধ্যে অস্ত্রবিরতি বা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হলেও ভূ-খণ্ড ভাগাভাগির বিপক্ষে ইউরোপীয় নেতারা।
আরও পড়ুন:
পরে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশাপাশি উপস্থিত থাকতে পারেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি নেই।
যদিও এখন পর্যন্ত ট্রাম্প-পুতিনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতিই সারছে হোয়াইট হাউস। তবে এ ব্যাপারে এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি কিয়েভ ও মস্কো।
এর আগে, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে লন্ডনে বৈঠক করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। তাদের এ আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘লন্ডনের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক গঠনমূলক হয়েছে। যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর নিরাপত্তা প্রতিনিধিরাও ছিলেন।’
এদিকে বহুল প্রতীক্ষীত ট্রাম্প-পুতিনে আসন্ন বৈঠকটি আলাস্কায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণ জানিয়েছে রয়টার্স। যেখানে বলা হয়, ১৮৬৭ সালে রাশিয়া এ অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। অঙ্গরাজ্যটির পশ্চিম প্রান্ত থেকে রাশিয়ার পূর্বতম অংশ খুব বেশি দূরে নয়, মাঝে শুধু বেরিং প্রণালি।
আরও পড়ুন:
ক্রেমলিনের মুখপাত্র ইউরি উশাকভ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আলাস্কা ও আর্কটিক এমন অঞ্চল যেখানে দুই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের মিল রয়েছে এবং বড় পরিসরে পারস্পরিকভাবে লাভজনক প্রকল্পের সম্ভাবনাও আছে।’ তবে এবারের বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ অধিক মনযোগ পাবে বলেও জানান উশাকভ।
ট্রাম্প-পুতিনের এবারের বৈঠক সফল হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে নানা সমীকরণ। তবে তাদের এ বৈঠকে পুতিনের চেয়ে বেশি চাপে রয়েছেন ট্রাম্প। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সার্জি রাডচেনকো বলেন, ‘ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে যে একান্ত সাক্ষাৎ হতে চলেছে, তা ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছে। আলাস্কা রাশিয়ার অন্তর্গত ছিল এবং অন্যায্যভাবে সেখান থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল। ইউক্রেন এখনই ১৯৯১ সালের সীমানা পর্যন্ত তার সীমানা পুনরুদ্ধার করবে। এই মুহূর্তে এটা একেবারেই অবাস্তব। তবে ইউক্রেনের স্বাধীনতা রক্ষা করা, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
এদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেও থেমে নেই রাশিয়া-ইউক্রেন হামলা-পাল্টা হামলা। শনিবার (৯ আগস্ট) রাশিয়া একটি শিল্পঞ্চলে ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় ইউক্রেন, এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। অবশ্য ইউক্রেনের পাঠানো ঐ ড্রোন ভূ-পাতিতের দাবি করে মস্কো।