কোন অভিমানে নীল তিমিরা থামিয়ে দিচ্ছে সাগরের সুর?

সমুদ্রে নীল তিমি
সমুদ্রে নীল তিমি | ছবি: ইউকে ডট হোয়েলস
0

একসময় নীল তিমির সুরে মুখর থাকতো সমুদ্রের গভীরের বিভিন্ন স্তর। তবে দিন যতই যাচ্ছে গভীর সমুদ্রে নেমে আসছে নীরবতা। গান গাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে তিমিরা। কোন অভিমানে সুর ছেড়ে দিচ্ছে নীল তিমিরা, কী ঘটছে সমুদ্রের নিচে?

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি। বিশাল দেহের এ প্রাণীরা নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শব্দের মাধ্যমে, তাদের গভীর গম্ভীর গান দিয়ে। এ শব্দ অনেক সময় ১০ কিলোমিটার দূরে থেকেও শোনা যায়। সমুদ্রে এসব শব্দ আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টাও স্থায়ী হয়।

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করছেন, নীল তিমিরা গান গাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। খালি চোখে কিংবা সমুদ্রের তীরে বসে এ নীরবতাকে উপলব্ধি করা যায় না।

দুটি গবেষণার ফলাফলে পাওয়া গেছে একই ধরনের উত্তর। প্রথমটি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড উপকূলে।

বিজ্ঞানীরা পানির নিচে হাইড্রোফোন বসিয়ে তিমিদের খাদ্য অনুসন্ধানভিত্তিক শব্দ রেকর্ড করেন। দেখা যায়, গ্রীষ্মকালে খাদ্য কমে গেলে এ শব্দ কমে যায়। আর তার কিছুদিন পরই বন্ধ হয়ে যায় তাদের সঙ্গী খোঁজার গানও।

দ্বিতীয় গবেষণাটি হয় ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে।

এসময় বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, প্রথম দুই বছর তিমিরা গান গাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়। আর তখনই ঘটে যায় ভয়াবহ এক সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ, যা ক্রিল নামের ছোট প্রাণীগুলোর মৃত্যু ঘটায়। এই ক্রিলই নীল তিমির প্রধান খাদ্য।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ফলে মেরিন হিটওয়েভ বা সমুদ্রে তাপমাত্রা বাড়ছে। যার ফলে, ক্রিলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। খাবার পাচ্ছে না তিমিরা। আর খাদ্য যখন কমে যায়, তখন শরীরে শক্তি থাকে না, গান গাওয়া কমে যায়। এমনকি সঙ্গী খোঁজার চেষ্টাও বন্ধ হয়ে যায়।

নীল তিমির গান বন্ধ হয়ে যাওয়া ছোট কোনো ঘটনা নয়। এটাকে প্রকৃতির এলার্ম বেল বলে অভিহিত করছেন বিজ্ঞানীরা। তিমিদের গান ঠিকভাবে না গাওয়ার মানে হলো, সমুদ্রের গভীরে পরিবর্তন হচ্ছে। বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে প্রাণী। আর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রস্তুত হওয়ারও বার্তা দেয় এ ঘটনা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা খুব দ্রুত এমন পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে যেখান থেকে ফেরত আসা প্রায় অসম্ভব। এরইমধ্যে ২০১৬, ২৩ এবং ২৪ সালে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখেছে বিশ্ব।

এসএস