ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে সমাধান না আসলেও জিতে ফিরেছেন পুতিন!

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

ইউক্রেন সংঘাত বন্ধে কোনও সমাধানে আসতে না পারলেও শেষপর্যন্ত আলাস্কা থেকে জিতেই দেশ ফিরছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমনটাই দাবি করছে মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন। আর বিশ্লেষকদের মতে, আলোচনার শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের গতিবিধি ইতিবাচক মনে হলেও, বৈঠক শেষে তার অভিব্যক্তি ইঙ্গিত করে পুতিনের কাছে কূটনৈতিকভাবে ধরাশায়ী হয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি যুদ্ধবিরতি রাজি না হলে রাশিয়াকে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, বৈঠক শেষে সেই স্ট্যান্ডপয়েন্ট থেকেও তিনি সরে এসেছেন বলছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ইউক্রেন ট্রাম্প-পুতিনের প্রায় ৩ ঘণ্টার বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে সৌজন্যতা রক্ষা করে চললেও এর পেছনে কূটনীতির সূক্ষ্ম খেলা দেখছেন বিশ্লেষকরা।

শুক্রবারের বৈঠক থেকে মেলেনি কোনও সমাধান সূত্র। সংবাদ সম্মেলন থেকে বাদ দেয়া হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। কিন্তু বৈঠক শেষে তড়িঘড়ি ফস্ক নিউজের মুখোমুখি হন ট্রাম্প। স্বীকার করেন, রাশিয়া ইউক্রেনে যে সব ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ চায় তা না দিলে যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহ দেখাবে না মস্কো। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন ওঠে ইউক্রেনের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে কতখানি ফলপ্রসূ হলো ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ছাড়া আর কিছুই বলতে নারাজ বিশ্লেষকরা। আর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলোচনার শুরুতে ট্রাম্প ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চললেও, বৈঠক শেষে তাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদ দুটোই হারিয়ে ফেলেছেন।

ক্লিনিক্যাল এবং ফরেনসিক মনোবিজ্ঞানী ডা. জন পল গ্যারিসন বলেন, ‘শুরুতে ট্রাম্পের উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুতিনকে দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয়, তিনি এই বৈঠক থেকে যা প্রত্যাশা করেছিলে তা পাননি। ট্রাম্পকে অনেক শান্ত দেখাচ্ছিল। তার কথায় তেমন জোর ছিল না। কিংবা তার হাত নাড়িয়ে কথা বলার যে অভ্যাস দেখা যায়, সেটিও তেমন চোখে পড়েনি।’

আরও পড়ুন:

এদিকে, মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন বলছে, বৈঠক থেকে ইউক্রেন ইস্যুতে কোনও সমাধান না আসলেও আলাস্কা থেকে জিতেই দেশে ফিরেছেন পুতিন। প্রথমত যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্রে পেয়েছেন লাল গালিচা সম্মাননা। দ্বিতীয়ত ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের তাগিদ না দেয়ায়, ইউক্রেনকে আরও কিছুদিন বেকায়দায় রাখতে পারবেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এ দুটি বিষয়ই ইঙ্গিত করে পুতিনকে কূটনৈতিকভাবে ধরাশায়ী করতে ব্যর্থ হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ফক্স নিউজকে ট্রাম্প স্পষ্ট বলছেন, আপাতত রাশিয়ার পণ্যে শুল্কারোপ কিংবা মস্কো থেকে যারা তেল কিনছে তাদের ব্যাপারে ভাবছেন না তিনি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে আরও ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর। যা ইঙ্গিত করে এই বিষতে মস্কোর প্রতিক্রিয়া আমলে নিচ্ছে ওয়াশিংটন। এবং একেও পুতিনের অর্জন হিসেবেই দেখছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

অন্যদিকে, ট্রাম্প-পুতিনের এই বৈঠক নিয়ে যখন বিশ্বের সব গণমাধ্যমে খবরের ছড়াছড়ি, তখন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নেটওয়ার্কে খুব সাদামাটাভাবেই প্রচার করা হচ্ছে আলাস্কা বৈঠকের সংবাদ। জোর দিয়ে বলা হচ্ছে, বৈঠকের পর মস্কোর ওপর নতুন করে আর শুল্কারোপ করেনি ওয়াশিংটন। অর্থাৎ পুরো বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনা হিসেবে।

বৈঠকের পর দুই দেশের প্রতিনিধিরা ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে এমন বিবৃতি দিলেও, কী কী বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে কিংবা যুদ্ধ বন্ধে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কী না এ নিয়ে মুখ খোলেনি কোনও পক্ষই। তাই কিসের ভিত্তিতে এই বৈঠকের সাফল্য দাবি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা।

ইএ