যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস সম্মতি দিলেও সাড়া নেই ইসরাইলের

ত্রাণ নিচ্ছে গাজাবাসী, হামাসের সৈনিকরা
ত্রাণ নিচ্ছে গাজাবাসী, হামাসের সৈনিকরা | ছবি: সংগৃহীত
0

হামাসের সম্মতির দুই দিন পরও গাজার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সাড়া নেই ইসরাইলের। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ইসরাইলের হামলা ও দুর্ভিক্ষে জর্জরিত ফিলিস্তিনিরাও তাকিয়ে আছেন নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের দিকে।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ায় ঘোষণায় টানাপোড়েন শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইসরাইলের সম্পর্কে। এদিকে ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার বরাত দিয়ে গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় ১৯ হাজার শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। হাসপাতাল ও স্কুলে হামলা করে মানবিক আইন ভেঙেছে ইসরাইল, অভিযোগ জাতিসংঘের।

গাজার প্রস্তাবের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে হামাসের সম্মতির পরও হামলা বন্ধ করেনি ইসরাইল। উল্টো গাজা সিটি দখলে মোতায়েন করা হয়েছে ৬০ হাজার রিজার্ভ ইসরাইলি সেনা। গেল একদিনে হত্যা করা হয়েছে অর্ধশত ফিলিস্তিনিকে। যুদ্ধ শুরুর পর উপত্যকায় প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার। যাদের মধ্যে প্রায় ১৯ হাজারই শিশু।

প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি এবার ইসরাইল মেনে নেবে। এমনটাই প্রত্যাশায় গাজাবাসীর। তবে অনেকেই বলছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা অব্যাহত রাখবে ইসরাইল।

স্থানীয়রা জানান, প্রস্তাব বাস্তবায়নে গাজাবাসী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ইতিবাচক। এর মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটতে পারে। যুদ্ধবিরতি নিয়ে গাজাবাসী আশায় আছেন। তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান।

গেল সপ্তাহে ইসরাইলের গাজা সিটি দখলের ঘোষণার পর যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নতুন করে আলোচনায় আনে মিশর ও কাতার। জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজিও হয় হামাস। তবে এখনো সবুজ সংকেত দেয় নি ইসরাইল। হামাসের রাজি হওয়া নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবের মতোই। খুব একটা পার্থক্য নেই বলে জানান কাতারের শীর্ষ এক কর্মকর্তা।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, ‘হামাসের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। এটা বেশ ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে ইসরাইল এখনো অপেক্ষায় রেখেছে। গাজা উপত্যকা খুব সংকটময় মুহূর্তে আছে। এখনই যুদ্ধবিরতি না হলে মানবিকভাবে বিপর্যয়ে পড়বে গোটা উপত্যকা।’

এরইমধ্যে নতুন প্রস্তাবটি নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্রের দাবি, ট্রাম্পের চাপেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে হামাস।

আরও পড়ুন:

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন ল্যাভিট বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংঘাত বন্ধে খুব জোড়ালো বিবৃতি পোস্ট করেছেন ট্রুথ সোশ্যালে। এরপরই হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণে সম্মত হয়। হামাসের গৃহীত প্রস্তাবের বিষয়ে এরইমধ্যে পর্যালোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।’

এদিকে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণার পর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয় ইসরাইলের। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনেছেন নেতানিয়াহু। তবে অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে শত বাধার মুখেও ফিলিস্তিনের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হবে না।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, ‘কে কি বললো এসব আমি ব্যক্তিগতভাবে গায়ে মাখি না।কূটনৈতিকভাবে মানুষের জন্য কাজ করে যাবে অস্ট্রেলিয়া। ইসরাইল অবশ্যই ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। মানুষ এসব সহিংসতার অবসান চায়। অস্ট্রেলিয়া তার অবস্থান থেকে সরবে না।’

এদিকে, ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার হাসপাতাল, স্কুল এবং ত্রাণ কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এমন অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার। এছাড়া, ইসরাইলি হামলায় ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়েছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাই কমিশনার রুভেন্দ্রিনি মেনিকদিওয়েলা বলেন, ‘বিশ্বের অনেক জায়গা থেকে আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনের সব নীতির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন ঠেকানো। আমরা মানব জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা দেখতে পাচ্ছি। বেসামরিক অবকাঠামোতেও হামলা চালানো হচ্ছে।’

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজার কয়েকটি শহরে বিমান থেকে ফেলা হচ্ছে মানবিক সহায়তা। তবে সেগুলো চাহিদা তুলনায় একেবারেই নগণ্য। শুধু অনাহারেই মারা গেছে ২৬৩ জন ফিলিস্তিনি।

ইএ