অবশেষে ধাপে ধাপে কার্যকর হতে যাচ্ছে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-বিনিময় চুক্তি। এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছে হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরাইলি জিম্মিরা। আর ধাপে ধাপে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে শুরু করেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
বন্দি-বিনিময়ের এই চুক্তিতে ইসরাইলে বন্দি থাকা সব ফিলিস্তিনি মুক্তি পেলেও বন্দি থাকবেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা মারওয়ান বারঘৌতি। গেলো ২৩ বছর ধরে বন্দি থাকা এ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়।
৬৬ বছর বয়সী এ রাজনীতিক ২০০২ সালে ইসরাইলে এক বিতর্কিত বিচারের পর থেকে বন্দি আছেন। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মধ্যে বারঘৌতি সবচেয়ে পরিচিত মুখ।
সম্প্রতি করা বিভিন্ন জনমত জরিপ অনুযায়ী, পশ্চিম তীর ও গাজায় ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের কাছে জনপ্রিয় বারঘৌতি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস বা দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস কারো সমর্থন এত বেশি নয়।
১৯৫৯ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় জন্ম হয় মারওয়ান বারঘৌতির। ১৫ বছর বয়সে তিনি যোগ দেন ফাতাহ আন্দোলনে। ২০০২ সালে পাঁচটি হত্যার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে ইসরাইল। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও বলেছে, তার বিচার ছিল আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তার তুলনা টানেন অনেকেই। ম্যান্ডেলার মতো বারঘৌতিও দীর্ঘ কারাবাসের মধ্যেই ফিলিস্তিনের জন্য ঐক্যের বার্তা ছড়িয়েছেন।
২০০৬ সালে বন্দিদশায় তিনি সহবন্দিদের সঙ্গে ‘প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করেন, যেখানে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালে দখলকৃত সব ভূ-খণ্ডে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।
হামাস, ফাতাহ ও অন্যান্য গোষ্ঠীর নেতারা এতে স্বাক্ষর করে, যা তার জনপ্রিয়তাকে আরও বিস্তৃত করে। বিশ্লেষকদের মতে, বারঘৌতি ফিলিস্তিনি রাজনীতির এমন এক প্রজন্মের প্রতিনিধি, যারা দলীয় বিভাজন পেরিয়ে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি চায়।
২০১৭ সালে বারঘৌতির নেতৃত্বে কারাগারে এক দীর্ঘ অনশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলেই ফিলিস্তিনি বন্দিদের সাক্ষাৎ ও চিকিৎসা অধিকার কিছুটা সম্প্রসারিত হয়। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামাস হামলার পর থেকে তিনি আবার একাকী সেলে রয়েছেন তিনি।
বন্দিজীবনে বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করেও বারঘৌতি এখনও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের অন্যতম প্রতীক। যিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য ব্যক্তিগত জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন।





