পোকরোভস্ক দখলের চেষ্টা সফল হয়েছে, পুতিনের দাবি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন | ছবি: সংগৃহীত
0

দনবাসের প্রবেশদ্বার পোকরোভস্ক দিয়েই মূলত বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহ করতো ইউক্রেন। শহরটির কাছেই আছে ইউক্রেনের একমাত্র কয়লার খনি। প্রায় ১৬ মাস ধরে করা এ শহরটি দখলের চেষ্টা সফল হয়েছে বলে সোমবার (১ ডিসেম্বর) দাবি করেন পুতিন। এরপরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জানান, ইউক্রেনে অভিযানের মূল লক্ষ্যের কাছাকাছি মস্কো। পোকরোভস্ককে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে রাশিয়া, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিস্ময়।

ইউক্রেনের দোনেৎস্ক প্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর পোকরোভস্ক। দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল দনবাসের প্রবেশদ্বারও এটি। এবার সেই পোকরোভস্ক দখলের দাবি করেছে রাশিয়া।

দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ফুটেজে দেখা যায়, পোকরোভস্কে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করছে সেনারা। পোকরোভোস্ক দখলের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন অভিযানে এটি একটি গুরত্বপূর্ণ জয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। কিন্ত পোকরোভস্ক দখল কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

একসময় দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি বড় রেল ও সড়ক জংশন ছিল পোকরোভস্ক। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের আগে সেখানে বাস করতেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য এটি ছিল একটি বড় অস্ত্রাগার। এখানকার সড়কপথ দিয়েই বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো।

এছাড়া শহরটির কাছে ইউক্রেনের একমাত্র কয়লার খনি অবস্থিত, যা ইস্পাত উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য এবং এটি দেশটির অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পোকরোভস্ক দখলের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় সেনা ঘাঁটি ধ্বংস এবং অস্ত্র সরবরাহ রাশিয়ার জন্য প্রকৃতপক্ষে বড় জয়।

আরও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বৈদেশিক নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো রব লি বলেন, ‘গেল ২০২৪ সালের আগস্টে রাশিয়া প্রথম পোকরোভস্কের উপকণ্ঠে পৌঁছায়। টোরেস্ক এবং চাসিভ ইয়ারের বেশিরভাগই এখন রাশিয়ার দখলে। পোকরোভস্কে অগ্রসর হতে তাদের অনেক সময় লেগেছে তাই এটি রাশিয়ার জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ জয় হতে পারে, এবং একটি অপারেশনাল সাফল্যও হতে পারে।’

পোকরোভস্ককে সম্পূর্ণ ঘিরে ফেলতে এবং ইউক্রেনীয় সরবরাহ লাইনকে হুমকির মুখে ফেলতে রুশ বাহিনী একটি পিন্সার মুভমেন্ট ব্যবহার করেছে। অস্ত্র সরবরাহ ব্যাহত করতে ছোট ইউনিট এবং ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পিছু হঁটতে বাধ্য করে। ফলে ইউক্রেনের পক্ষে পুনরায় অস্ত্র সরবরাহ করা এবং পায়ে হেঁটে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

রব লি বলেন, ‘রাশিয়ান সেনারা শহরের খুব গভীরে, উত্তর-পশ্চিম কোণে, উত্তর কোণে প্রবেশ করছে। তারা পুরো এলাকাটির কতটুকু নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তা কিছুটা অস্পষ্ট। তবে গেল এক বা দুই সপ্তাহে, রাশিয়া শহরটিতে আরও বিশাল সেনাবাহিনী প্রবেশ করিয়েছে।’

তবে রাশিয়া পুরো পোরকোভস্ক নিয়ন্ত্রণের দাবি করলেও, ইউক্রেন বলছে রুশ বাহিনী কেবল দক্ষিণ পোরকোভস্কের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে। শহরটির উত্তরাঞ্চল এখনও ইউক্রেনীয় বাহিনী রক্ষা করছে বলে জানিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

রাশিয়া পোকরোভস্কের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিলে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এটি হবে দোনেৎস্কে রাশিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক বিজয়। এর ফলে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনেও প্রভাব পড়তে পারে। তবে বিশ্লেষকদের মতে রুশ বাহিনী পুরো দোনেৎস্ক নিয়ন্ত্রণে অক্ষম। তাদের প্রতিহত করতে ব্যাপক হতাহত চালিয়ে যেতে পারে ইউক্রেন।

এসএইচ