শেষবারের মতো নিজের পছন্দের ভিডিও গেমগুলো খেলছে ১৪ বছর বয়সী এক অস্ট্রেলিয়ান বালক। কেননা এরপর থেকে নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এগুলো খেলার সুযোগ পাবে না সে।
গতকাল (মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় মধ্যরাত থেকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সরকারি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে অস্ট্রেলিয়া। এরপর থেকেই ফেসবুক, টিকটক, ইনস্ট্রাগ্রাম, এক্স, ইউটিউবসহ জনপ্রিয় দশটি সামাজিক প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের কম বয়সী লাখ লাখ ব্যবহারকারী।
এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে অভিভাবকদের মাঝে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে অতিরিক্ত মিডিয়া আসক্তি কমাতে সিদ্ধান্তটি বেশ কার্যকরী বলে মত অনেক অভিভাবকদের ।
একজন অভিভাবক বলেন, ‘অনেক সময় নাস্তা না করেই বাচ্চা স্কুলে চলে যায়। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। তাই তাকে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছি।’
তবে অনেক অভিভাবক শঙ্কায় রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারবিহীন তাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে।
আরও পড়ুন:
অন্য আরেকজন অভিভাবক বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি শিশু-কিশোরদের বাস্তবমুখী করার পরিবর্তে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এর ফলে তারা পর্যাপ্ত তথ্য প্রাপ্তির সুযোগও হারাবে। সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক নয়।’
কিন্তু সিদ্ধান্তটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ব্যথিত অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের নিচের ব্যবহারকারীরা।
এ নিয়ে একজন তরুণ বলেন, ‘আমি আর আমার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অনলাইনে কথা বলতে পারব না। তাদের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।’
এদিকে, ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য মিডিয়া বন্ধের সিদ্ধান্তটি অস্ট্রেলিয়াবাসীদের জন্য গর্বের বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। জানান, এর মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শিশু কিশোরদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, ‘সিদ্ধান্তটির মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের কাছে নজির স্থাপন করল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। আগামী মাসগুলোতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও ইতিবাচক হবে সিদ্ধান্তটি।’
এর আগে এক ভিডিও বার্তায়, নতুন পরিস্থিতিতে শিশু-কিশোরদের পাশে থাকতে তাদের পরিবার ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান অ্যালবানিজ।
নতুন আইনে অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থাকছে না কোনো শাস্তির বিধান। তবে সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে গেলে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে সর্বোচ্চ ৪৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। এছাড়া, এক্স বাদে অন্যান্য তালিকাভুক্ত সাইটগুলো এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া, ভিপিএন ব্যবহার করে শিশু-কিশোররা যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য সরকার সতর্ক আছে বলে জানান দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রী আনিকা ওয়েলস।




