১৭ হাজার কোটি ডলার খরচ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের দাবি, এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, তা যুক্তরাজ্যের মতো একটি দেশের পুরো বছরের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
পরিকল্পনায় আছে তিব্বত মালভূমি থেকে নেমে আসা নদীর ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রসারিত অংশে পাঁচটি বাঁধ নির্মাণের। ২০৩০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করছে চীন।
তবে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করায় উদ্বেগে পড়ে গেছে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও বাংলাদেশ। কারণ সেচ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও সুপেয় পানির জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্ভর করতে হয় এই দুই দেশকে।
চীন সীমান্তবর্তী ভারতের অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু চলতি বছরের শুরুতে জানান, এই বাঁধের কারণে রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ শুকিয়ে যেতে পারে, এবং এর ফলে পার্শ্ববর্তী আসাম রাজ্যের মতো ভাটির অঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
নদী গবেষকদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, শুধু পানি সংকট নয়, এই বাঁধের কারণে পলির আস্তরণও ভাটি অঞ্চলে কম প্রবাহিত হবে। এতে করে কমে যাবে কৃষি জমির উর্বরতা- এবং এর প্রভাব পড়বে উৎপাদন ব্যবস্থায়ও।
ইতিহাস বলছে, ১৯৬০ সালে বিশেষ এই সীমান্ত অঞ্চলটিতে সংঘাতে জড়িয়ে ছিল চীন ও ভারত। এবার বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ আটকে দিয়ে আবারও এমন কোনো বৈরিতায় জড়াতে যাচ্ছে দুই দেশ- এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে চীনের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিষয়ক তথ্য লুকিয়ে রাখার কারণে।
শঙ্কার আলোচনা এখানেই শেষ নয়, পানি সংকট ছাড়াও, এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ভূমিকম্প প্রবণ ওই অঞ্চলে বাড়তে পারে ভূমিধ্বস, হিমবাহ হ্রদের বন্যা এবং ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশেষ করে চলতি বছরের শুরুতে তিব্বত অঞ্চলে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে এলাকাটিতে বাঁধ নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা- বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।