সীমান্তে সংঘাতের মধ্যেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

থাইল্যান্ডের নতুন প্রধান অনুতিন
থাইল্যান্ডের নতুন প্রধান অনুতিন | ছবি: সংগৃহীত
0

কম্বোডিয়ার সঙ্গে চলমান সংঘাতের মধ্যেই পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল। ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের উদ্দেশে অধ্যাদেশ জারি করেছেন তিনি। দ্বন্দ্ব নিরসনে আজ রাতেই দুদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে ফোনালাপের কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

টানা পাঁচ দিন ধরে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে চলছে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। এর জন্য পাল্টা-পাল্টি অভিযোগের তীরও ছুড়ছে ব্যাংকক-নমপেন। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন থাইল্যান্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল। এরজন্য শুক্রবার পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের রাজকীয় অধ্যাদেশও জারি করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেন, ‘অতীতে ৬০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হত। কখনও কখনও এটি ৬০ দিনের কিছু আগেও হয়েছে। তারপর নির্বাচনের ফলাফল ৪৫ দিনের মধ্যে অনুমোদিত হতে হয়। এরপর সরকার গঠনের জন্য আরও এক মাস সময় লাগে। রাজা কর্তৃক নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে অব্যাহতি দেয়া হবে। আমার মনে হয় এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগবে।’

এদিকে ৮ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সংঘাত শুরু হওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। জীবন রক্ষায় বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন এবং নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছেন থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের উভয় পাশের অন্তত ছয় লাখ বাসিন্দা। এরমধ্যে কম্বোডিয়ার চেয়ে থাইল্যান্ডে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শুক্রবারও সংঘাত অব্যাহত। এতে মানুষের দুঃখ -দুর্দশা ও হতাশা পাল্লা ভারী হচ্ছে।

সীমন্ত অঞ্চলের একজন বলেন, ‘এটা আমার জীবনে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা। এই সংঘাতে আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি। এখন আমার সন্তানদের জন্য আমাকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু কীভাবে, তা জানি না।’

বিতর্কীত সীমান্ত এলাকার সংঘাতে থাইল্যান্ড বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে কম্বোডিয়া।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা বলেন, ‘থাই সেনাবাহিনী বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। থাইল্যান্ড যদি সত্যিই প্রকৃত শান্তি চায় তাহলে অবিলম্বে তাদের হামলা বন্ধ করতে হবে।’

আরও পড়ুন:

এদিকে কম্বোডিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার লক্ষ্যকরে হামলার দাবি করেছে থাইল্যান্ড। এ অবস্থায় সংঘাত ইস্যুতে স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে মধ্যস্থতাকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে ফোনে কথা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল।

তিনি বলেন, ‘আমি আজ থাই সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে যাব। কারণ আজ সন্ধ্যার পরেই আমি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে কথা বলব। এছাড়া সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বশেষ আপডেট নিতে যাবো।’

চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবং শান্তি চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে থাই-কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হবে বলে নিশ্চত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।

তিনি বলেন, ‘আমরা আটটি যুদ্ধের সমাধান করেছি। একবার ভাবুন, আটটি যুদ্ধের সমাধান হয়েছে। যদিও থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া ইস্যুতে আমাকে আবারও ফোন কল করতে হবে। যার মাধ্যমে তাদের আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনব।’

পান্না ত্রিভুজ নামের একটি ভূখণ্ডকে উভয় দেশই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করায় থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার দ্বন্দ্ব ১১৮ বছরের পুরনো। তারই জের ধরে পাঁচ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ২৮ জুলাই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই দেশ। এরপর ২৬ অক্টোবর হয় শান্তি চুক্তি। একমাস না যেতেই বিতর্কীত সীমান্তে কম্বোডিয়া নতুন করে স্থল মাইন পুঁতে রাখায় অভিযোগ তুলে ১১ নভেম্বর শান্তিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় থাইল্যান্ড। এরপর৭ ডিসেম্বরে বেশ কয়েকজন সেনা হতাহতের ঘটনায় ৮ ডিসেম্বর কম্বোডিয়ায় বিমান হামলা শুরু করে থাই সেনারা।

এসএস