ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকেও যুদ্ধ না থামার শঙ্কা ইউক্রেনীয়দের

ভ্লাদিমির পুতিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প
ভ্লাদিমির পুতিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ থামানো সম্ভব হবে না বলে শঙ্কায় ইউক্রেনীয়রা। পুতিনের কথায়-কাজে মিল নেই বলে অভিযোগও তুলে এই শঙ্কার কথা জানান তারা। অন্যদিকে সন্দিহান ও সম্ভাবনার মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রুশ জনগণ। আর যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে কিছু না বললেও দুই নেতার বৈঠকটি ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পুতিনের বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিভ। শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউরোপকেও পাশে চাইছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে সম্প্রতি রাশিয়াকে আল্টিমেটাম দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। না হলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়ে রাখনে তিনি। এমনকি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভের দেয়া পারমাণবিক সাবমেরিনের হুমকিতে রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশও দেন ট্রাম্প। এতে করে ওয়াশিংটন-মস্কো বৈরিতা পৌঁছায় চরমে।

এ অবস্থায় ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বেশি ঘনীভূত হয়। এমন পরিস্থিতিতে সম্পর্কের পালে লাগা উত্তপ্ত হাওয়াকে শীতল করার পথে এগুচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গত বুধবার (৬ আগস্ট) পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর খবর আসে, শিগগিরই সাক্ষাৎ হবে দুই নেতার। হোয়াইট হাউজ ও ক্রেমলিনের দেয়া এমন তথ্যের পর বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক প্রসঙ্গ।

রুশ অভিযানে সংকটে জর্জরিত ইউক্রেনের বাসিন্দারা ট্রাম্প-পুতিনের আসন্ন বৈঠক নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ তারা মনে করেন, পুতিনের কথায়-কাজে মিল নেই। যার ফলে বৈঠক করে যুদ্ধ থামানো সম্ভব নয় বলে ধারণা ইউক্রেনীয়দের।

ইউক্রেনের স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় পুতিনকে বিশ্বাস করা মানে নিজেকে অসম্মান করা। তিনি কেবল শক্তির অবস্থান থেকে সবকিছু বোঝেন। আমি খেরসনে থাকি। রাশিয়ান দখলদারিত্বের সময়ও সেখানে ছিলাম। আমি দেখেছি তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমি পুতিনকে বিশ্বাস করি না, তাই আমার মনে হয় এই বৈঠক খুব ফলপ্রসূ হবে না। তিনি কখনও শান্তি স্থাপন করতে পারবেন না।’

ক্রেনের একজন বলেন, ‘এখনই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। হয়তো সাফল্য অর্জনে ধাপে ধাপে কাজ করে যেতে হবে।’

এদিকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাশিয়ার জনগণও। ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক ঘিরে অনেক মস্কোবাসী আশাবাদী হলেও কেউ কেউ মনে করছেন- যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আসন্ন আলোচনা খুব কাজে আসবে না।

রাশিয়ায় বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘পুতিন-ট্রাম্পের মধ্যে আসন্ন বৈঠকটি ইতিবাচক হবে বলে মনে হচ্ছে। আলোচনা ছাড়া কোনও ফলাফল আসবে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব থাকা উচিত। যদিও আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিরোধ্য অবস্থানে রয়েছে।’

স্থানীয় একজন বলেন, ‘এতদিন ধরে যেভাবে যুদ্ধ হচ্ছে, তাতে আমার মনে হচ্ছে এটি কখনও শেষ হবে না। যার কারণে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়তো খুব একটা কাজে আসবে না।’

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়ার অবস্থান তুলে ধরার একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন রুশ প্রেসিডেন্টের বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিভ। বৈঠকটি ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে ইউক্রেনের যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে কিছুই বলেননি তিনি।

রাশিয়ার বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিভ বলেন, ‘রাশিয়ান এবং মার্কিন নেতাদের মধ্যে যে আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা অবশ্যই ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে উঠতে পারে। যেখানে রাশিয়ার অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে। আশা করি এই সংলাপ আরও পরিবর্তিতেও অব্যাহত থাকবে। সব মিলিয়ে দুই নেতার সংলাপ যেমন ফলপ্রসূ হবে, তেমনি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে বৈঠকটি হলে, তা হবে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া প্রথম শীর্ষ বৈঠক। এর আগে ২০২১ সালের জুনে জেনেভায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পুতিনের বৈঠক হয়েছিল। পুতিনের বৈঠকের পর জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে চান বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউরোপকেও পাশে চাইছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

এসএস