সংবাদ পাঠিকা খবর পড়ার সময় ভবনে ইসরাইলি হামলা বিস্ফোরণের পর মুহূর্তেই ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় পুরো স্টুডিও। চেয়ার থেকে সরে যাওয়ার পরেও তার কণ্ঠে আল্লাহু আকবর ধ্বনি।
সামরিক ও জ্বালানি স্থাপনার পর এবার ইরানের গণমাধ্যমে হামলা শুরু করলো ইসরাইল। সোমবারের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল। হামলার আগেই ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, সরকারের প্রোপাগান্ডায় মুখপাত্রের কাজ করা গণমাধ্যমগুলো শিগগিরই নিশ্চিহ্ন করা হবে।
হামলার কিছুক্ষণ বাদেই আবারও সম্প্রচারে ফিরে গণমাধ্যমটি। ইসরাইলের চ্যানেল টুয়েলভ ও চ্যানেল ফোরটিনে পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে ইরান। দুই রাষ্ট্রের রাজধানী থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাবার আহ্বান জানিয়েছে দুই পক্ষের সামরিক বাহিনী।
এদিকে দেরি হওয়ার আগেই দুপক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কানাডায় জি সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ট্রাম্প জানান, ইসরাইলের দীর্ঘদিনের সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। তবে তেল আবিবকে রক্ষায় মার্কিন সেনা পাঠানো হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দাবি, আগ্রাসনের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে ফেলছে ইসরাইল।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান বলেন, ‘পশ্চিমাদের সমর্থনে ইসরাইল পুরো গাজা ধ্বংস করেছে। অন্যান্য দেশকে উপহাস করছে। এখন ইরানকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। বর্তমান কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসরাইল নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে ফেলছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলাম। ৬১তম দিনে বলেছি, আমরা কোনো চুক্তি করবো না। বর্তমান পরিস্থিতি দুইপক্ষের জন্যই কষ্টদায়ক। ইরানের যুদ্ধ জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই দেরি হওয়ার আগেই দুইপক্ষকেই আলোচনায় বসা উচিত।’
চারদিনের অব্যাহত হামলা-পাল্টা হামলায় দুই দেশে প্রাণহানি ছাড়িয়েছে আড়াইশ’র ঘর। রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্যেই তেল শোধনাগার আর বিদ্যুৎ গ্রিডসহ ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় রাতভর হামলা চালায় ইরান। শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে এ পর্যন্ত ইরান ৩৭০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল আর কয়েকশ’ ড্রোন ছুঁড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলের স্থানীয় একজন বলেন, ‘সংকেত পেয়েই আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেই আমরা। মিনিট দেড়েক পরই বিকট আওয়াজ পেলাম, তারও ৩০ সেকেন্ড পর বিস্ফোরণের শব্দ। বাসার ভেতরে নিমিষেই সব উড়ে গেলো।’
অন্য একজন বলেন, ‘অনেক বড় বিস্ফোরণ ছিল। সব বাড়িঘর ভয়ঙ্করভাবে কাঁপছিল। ভীষণ ভয়াবহ ছিল পুরো পরিস্থিতি।’
তেলআবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতির মুখে সোমবার (১৬ জুন) বন্ধ ঘোষণা করা হয় তেল আবিবের মার্কিন দূতাবাস। ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণের তীব্রতায় উড়ে গেছে কয়েকশ’ মিটার দূরের হোটেল ও বাসাবাড়ির জানালা। অন্যদিকে ইসরাইলি হামলায় হাসপাতাল আর নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তেহরানের বাসিন্দারা। পশ্চিমাঞ্চলেও ইসরাইলের রক্তক্ষয়ী হামলার খবর নিশ্চিত করেছে ইরান।
এমন হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যেই সোমবার তেহরানের আকাশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি করেছে ইসরাইল। এক সপ্তাহ ধরে ইরানের আকাশসীমায় বাণিজ্যিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকার মধ্যেই দেশের ভেতরে ও বাইরে পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট বাতিলের সময় বাড়িয়েছে দেশটির বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, ইরানের অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা মিসাইল লঞ্চারের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ধ্বংসেরও দাবি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। যদিও ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে নতুন করে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আই.এ.ই.এ।
এরমধ্যেই, ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে ৫০ বছরের পুরোনো পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি এনপিটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে নিশ্চিত করেছে ইরান সরকার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তিবিষয়ক আলোচনা নতুন করে শুরুর বিষয়ে আশাবাদী হলেও ইসরাইলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পর আলোচনা অর্থহীন, বলছে তেহরান।
এমন সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগর থেকে পশ্চিমে যাত্রা শুরু করেছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি নিমিৎজ। জাহাজ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য, ভিয়েতনামে পূর্বনির্ধারিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান বাতিল করে সোমবার সকাল থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রণতরীটি। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকার মধ্যেই মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন ও রাশিয়া।





