গাজায় দুর্ভিক্ষের জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী ট্রাম্পের

বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু, ডোনাল্ড ট্রাম্প
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু, ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজায় দুর্ভিক্ষের জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকেই দায়ী করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে ট্রাম্প বললেন, গাজায় প্রকৃত দুর্ভিক্ষ চলছে। অথচ এর একদিন আগেই নেতানিয়াহু বলেছিলেন, উপত্যকাটিতে কোনো ক্ষুধার্ত মানুষ নেই। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় খাবারের অভাবে মৃত্যু হয়েছে ১৪ ফিলিস্তিনের। এদিকে দিনে দশ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও কমেনি ইসরাইলি আগ্রাসন। একদিনে ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছে অন্তত ৮০ জন। এদিকে জাতিসংঘের সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্রনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশ প্রস্তাব দিলেও সম্মেলনে অংশ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল।

গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণের বস্তা ফেলছে ইসরাইল। রাফা সীমান্ত দিয়েও অব্যাহত রয়েছে ত্রান সরবরাহ। ইসরাইলের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানও বিমান থেকে প্যারাসুটে করে গাজাবাসীর জন্য বস্তাবন্দি সহায়তা দিচ্ছে। আর এসব ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়েও রীতিমত যুদ্ধ করছে ফিলিস্তিনিরা। এই যুদ্ধে পিছিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। এমনকি হুড়োহুড়িতে বা উপর থেকে বস্তা পড়ে আহতও হচ্ছেন অনেকে।

ফিলিস্তিনিদের একজন বলেন, ‘উপর থেকে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে। শারীরিকভাবে যারা শক্তিশালী তারাই কেবল সংগ্রহ করতে পারে। যারা তুলনামূলক দুর্বল, বৃদ্ধ ও নারী তারা ত্রাণ সংগ্রহ করতে পারে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘প্যারাসুট থেকে একটি বস্তা হাতের ওপর পরেছিলো। দুই মাস অসুস্থ ছিলাম। তাই এখন আর ত্রাণ সংগ্রহ করতে যাই না।’

ত্রাণ নিতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যেভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে এতে অনেকেই আহত হচ্ছেন। আমার স্বামীও পায়ে আঘাত পেয়েছেন।’

যদিও গাজার জন্য সরবরাহ করা এসব ত্রাণ, মহাসমুদ্রে এক ফোঁটা পানির সমান বলছেন জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বা ডব্লিওএফপি। যেখানে শিশুদের জন্য বিপুল পরিমাণ ফর্মুলা দুধ ও প্রচুর খাদ্য সহায়তা দরকার। সেই সঙ্গে দরকার জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের।

ডব্লিওএফপির আঞ্চলিক পরিচালক সামার আবদেলজাবের বলেন, ‘গাজায় প্রতিদিন ৬০ ট্রাক সহায়তা প্রবেশ করছে। যা যথেষ্ট নয়। লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিদিন ১০০ ট্রাক সহায়তা বিতরণ এবং কমিউনিটি কিচেন পুনরায় চালু করা। যাতে সুন্দরভাবে খাবার বিতরণ করা যায়।’

গাজার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় ডব্লিওএফপি। এছাড়াও ৯০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

এ পরিস্থিতিতে গাজায় প্রকৃত দুর্ভিক্ষ চলছে বলে স্বীকার করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্কটল্যান্ডে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এমনকি গাজায় ফুড সেন্টার খোলারও ঘোষণা দেন। সেসময় গাজার দুর্ভিক্ষের জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকেই দায়ী করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ইস্যুতে অন্তত ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর ভিন্নমত দেখা গেলো।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ফুড সেন্টার খুলতে যাচ্ছে। সেখানে আমরা খাবার সরবরাহ করবো। প্রয়োজনে ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করা হবে। আমাদের অনেক অর্থ রয়েছে। সেখান থেকে গাজাবাসীর জন্য অল্প কিছু খরচ করবো। অন্যান্য দেশও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।’

দুর্ভিক্ষ ইস্যুতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করলেও গাজায় যুদ্ধের তরিকা পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ধরণে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। হামাস বন্দিদের মুক্তি দিতে চাচ্ছে না। এখনও ২০ জন জীবিত বন্দি রয়েছে তাদের কাছে। তাই নেতনিয়াহুকে বলেছি যুদ্ধের ধরণ পরিবর্তন করতে।’

এদিকে জাতিসংঘ মন্ত্রীপরিষদ পর্যায়ের বৈঠকে ফিলিস্তিনকে দ্বি-রাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে গাজা সংকট সমাধানের সম্মত হয় অনেক দেশ। তবে এতে অংশ নেয়নি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘ভয়াবহ বাস্তবতা ঠেকাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। যার জন্য এই সম্মেলন অন্যতম সুযোগ। দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি কার্যকর দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের যৌথ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে।’

সম্মেলনের প্রথম দিন হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহত সকলের প্রতি দাড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান উপস্থিত সদস্যরা।

সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতার আহ্বান জানান সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ।

এসএস