তীব্র তাপপ্রবাহে গাজায় মানবিক সংকট; বিদ্যুৎহীনতায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভোগ চরমে

গরমে অতিষ্ট গাজাবাসী
গরমে অতিষ্ট গাজাবাসী | ছবি: এপি নিউজ
0

বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় গ্রীষ্মের তাপে সংগ্রাম করছেন অন্তত ২০ লাখ ফিলিস্তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। সংক্রমণের ঝুঁকিতে ইসরাইলি হামলায় আহত ও দগ্ধ রোগীরা। এছাড়া জীবন নিয়ে শঙ্কিত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং শ্বাসকষ্টের রোগীরা।

ইসরাইলি আগ্রাসনে বাস্তুচ্যুত হয়ে অস্থায়ী তাঁবুর বাসিন্দা গাজার লাখ লাখ বাসিন্দা। খাদ্য, সুপেয় পানি, চিকিৎসা সামগ্রী ও জ্বালানি সংকটের মধ্যে; তীব্র তাপপ্রবাহ দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।

অসহনীয় গরমে দিশেহারা অনেক শিশু। আবার অনেকে উপায় না পেয়ে সাগরের লোনা পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছে একটু প্রশান্তির জন্য। এতে গরম থেকে মুক্তি তো মিলছেই না; উল্টো পেটে সংক্রমণ, চিকেনপক্স এবং গায়ে ফুসকুড়িসহ আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের চর্মরোগে।

গাজার একজন বলেন, ‘সারাদিনই রোদে থাকতে হয়। বাস্তুচ্যুত হওয়ায় আমাদের কাছে কোনো জিনিসপত্র নেই। বাচ্চারা সারাদিন বালিতেই সময় কাটায়। এতে করে গরমের মধ্যে তাদের পেটে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠায় জ্বালাপোড়াও করে।’

বিদ্যুৎ না থাকায়, প্রচণ্ড গরমকে উত্তপ্ত চুলার সঙ্গে তুলনা করছেন কেউ কেউ। আবার অনেক গাজাবাসী বলছেন, কাটা ক্ষততে লবণ ছিটিয়ে দিলে যে যন্ত্রণা হয়, গরমে বালিতে বসবাস করে সেই যন্ত্রণা ভোগ করছেন তারা। রাতেও গা জুড়ানো কোনো উপায় নেই। জীবন ঝুঁকিতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং শ্বাসকষ্টের রোগীরা।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘রোদের এতো তাপ, মনে হয় গরম চুলায় বসবাস করছি। দিনের মতো, রাতেও অনেক গরম থাকে। বিদ্যুৎ না থাকায় বাতাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে এতো কষ্ট হয় যে; মনে হয় শরীরের ক্ষততে কেউ লবণ ঢেলে দিয়েছে।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং শ্বাসকষ্ট আছে। এতো গরম সহ্য করার মতো না। গত রাতে তাঁবুতে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তাঁবু থেকে বেরিয়েও শীতলতার স্পর্শ পাইনি। সাগরে শুধু ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাই, কোনো বাতাস নেই।’

ইসরাইলি গণহত্যা ও ধংসযজ্ঞের মধ্যে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে ধুঁকছেন অনেক আহত গাজাবাসীও। বর্বর হামলায় ঝলসে যাওয়া রোগীদের ব্যথা আরও অসহনীয় করে তুলছে গরম আবহ। ঘামে ভিজে ক্ষত শুকাতে যেমন সময় লাগছে তেমনি ঝুঁকি বাড়ছে সংক্রমণের।

আহতদের মধ্যে একজন বলেন, ‘গ্রীষ্মের তাপে পোড়া ক্ষত শুকাতে দেরি হচ্ছে। কারণ শরীর ঘামে ভিজে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। সীমান্ত বন্ধ থাকায় আমাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ ও সরঞ্জামেরও সংকট দেখা দিয়েছে।’

অন্য একজন বলেন, ‘আমরা এই গরমে যত্নের অভাবে ভুগছি। শরীরে আঘাত নিয়ে, রোগ নিয়ে এভাবে তাঁবুতে থাকা অসম্ভব। কিন্তু আমরা নিরুপায়।’

একদিকে তীব্র মানবিক সংকটে ধুঁকছেন গাজা উপত্যকার অন্তত ২০ লাখ ফিলিস্তিনি। অথচ একইসময় শীতাতপ ঘর কিংবা সাগরসহ পানির উৎসগুলোতে হেসে-খেলে বেড়াচ্ছে ইসরাইলিরা। চরম এ বৈষম্য দেখেও নিশ্চুপ পুরো বিশ্ব।

এসএস