হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও ইসরাইলের অবস্থান স্পষ্ট নয়

ত্রাণ নিচ্ছে গাজাবাসী, হামাসের সৈনিকরা
ত্রাণ নিচ্ছে গাজাবাসী, হামাসের সৈনিকরা | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাস সম্মত হলেও ইসরাইলের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাস চাপে আছে বলেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরাইলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় ভয় পেয়ে হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে দাবি তেল আবিবের। এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ চলছেই। দেশটির সেনাবাহিনীর হামলায় আজ (বুধবার, ১৯ আগস্ট) ২১ ফিলিস্তিনির প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবে সম্মত হামাস। বিবিসি বলছে, মধ্যস্থতাকারী- কাতার ও মিশরের কাছে এরইমধ্যে লিখিতভাবে সম্মতির কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।

মূলত মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের জুনে প্রস্তাবিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই এ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব। যার মধ্যে আছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, হামাসের কাছে থাকা ৫০ বন্দির মধ্যে ২৫ ইসরাইলির মুক্তি। যুদ্ধবিরতির সময়ে দুই দফায় এসব বন্দিদের মুক্তি দেয়ার কথা আছে প্রস্তাবে। এসময়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নেতানিয়াহু সরাসরি কথা না বললেও জানান, হামাসের সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যাচ্ছে তারা চাপে আছে। আর দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়েল জামির জানিয়েছেন, তাদের মূল লক্ষ্য গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে হামলা আরও জোরদার করা।

ইসরাইলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তেল আবিবের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় ভয় পেয়ে হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এ সপ্তাহের শেষের দিকে গাজা সিটি দখলে সেনাবাহিনীর পরিকল্পনার অনুমোদন দিতে পারে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা।

ইসরাইলি গণমাধ্যমকে দেশটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা হামাসের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবগত আছে। যদিও গত সপ্তাহে তারা জানিয়েছিল, সব বন্দিদের ফেরত দিলেই কেবল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে ইসরাইল।

এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও গাজায় থামছে না ইসরাইলের আগ্রাসন। খান ইউনিস, দেইর আল বালাহতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে হামলায় নতুন করে আরও কয়েকজন নিহত হয়েছে। এছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলে বেইত লাহিয়া অঞ্চলের কাছে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক ত্রাণ ও মানব উন্নয়ন সংস্থা বলছে, গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত সংস্থাটির ৩৬০ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

ইসরাইলের অবরোধ আর অব্যাহত হামলা গাজার বেশিরভাগ এলাকাকে একদিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে, অন্যদিকে খাবারের অভাবে উপত্যকাটিতে দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভিক্ষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের হামলায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার।

অন্যদিকে ক্ষুধা আর অনাহারেও প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। গতকাল সোমবার (১৮ আগস্ট) পর্যন্ত অনাহারে ২৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার ১১২ জনই শিশু।

এদিকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে হামাসের কাছে বন্দিদের মুক্তির দাবিতে তেল আবিবের একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ইসরাইলিরা। আর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরাইলে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে গত রোববার (১৭ আগস্ট)। এদিন একই দাবিতে লাখ লাখ মানুষ ইসরাইলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন।

এসএস