ফরেন সার্ভিস একাডেমির এ আলোচনা বিবেচিত হচ্ছিলো চূড়ান্ত হিসেবে। কিন্তু জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে না পারায় কাঠামো পরিবর্তন করে নাম পাল্টে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি করা হয়। সেটি নিয়েও দ্বিমত দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এ কমিটি গঠনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করলেও বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের দাবি; এ কমিটি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করে নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করে দেবে। সাংবিধানিক পদগুলোয় নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি বা আইনি ব্যবস্থায় হাঁটতে চায় দলগুলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চায় সমস্ত সংস্থাগুলোর স্ব স্ব আইন যেগুলো আছে তার মধ্যে আমরা সংশোধনী আনবো। এছাড়া সেই আইনগুলোকে সংস্কার করে আরো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা করে নিশ্চয়তা বিধান করি। এছাড়া গঠন প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী করি।’
জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, এবি পার্টি, সিপিবি, গণসংহতি ও গণঅধিকার পরিষদের মতো বাকি দলগুলো বলছে; যাতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত না হয় সেজন্যই সাংবিধানিক কমিটির পক্ষে তারা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সাংবিধানিক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। এখানে সরকারও আছে। এছাড়া সরকার বিরোধী যারা তারাও আছে। এইটা আমরা দেশের জন্য জরুরি মনে করি।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বিএনপি এবং তার সঙ্গে গুটি কয়েক দলের আপত্তির কারণে, বাধার কারণে এই নিয়োগ কমিটি যার মধ্যে দিয়ে আসলে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ স্বাধীনভাবে হবে সেটা বাস্তবায়ন হলো না।’
এ নিয়ে অর্ধবেলার আলোচনায়ও একমত হতে না পারায় মধ্যাহ্নভোজনের বিরতি পর আলোচনা শুরু হয় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সদস্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে। এ পর্বেও মতানৈক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে দলগুলোর মধ্যে। জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, গণসংহতির মতো অধিকাংশ দল উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চায়; কারণ কোন দল যাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংবিধান পাল্টে ফেলে স্বৈরাচার না হয়ে ওঠে।
বিএনপি ও এর জোটসঙ্গীদের দাবি, পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন ও সংবিধান সংশোধনে বাধা সৃষ্টি করবে। তাই বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচনের পক্ষে বিএনপি।
আজ (রোববার, ২৯ জুন) সকালে সূচনা বক্তব্যে কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংস্কার আলোচনা আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন। আগামী মাসে প্রতিশ্রুত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী যে কাঠামো ছিল তা সংস্কার করা। এই সংকল্প থেকে আমরা সবাই এক হয়েছিলাম। বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি হলেও আলোচনা আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না।’
পরে বিকেলে আলী রিয়াজ জানান, তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই সনদের ব্যাপারে এক ছাতার নিচে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন।