ফিরে দেখা ৮ জুলাই: বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে দেশজুড়ে বেগবান হয়েছিলো আন্দোলন

জুলাই ক্যালেন্ডার | ছবি: এখন টিভি
0

গতবছর ৮ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে সারা দেশে কয়েক ঘণ্টার জন্য সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এদিন কেন্দ্রীয় আন্দোলন ছিলো শাহবাগে। শাহবাগের পাশাপাশি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের মোড়, বাংলামটর, মিন্টো রোড, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান জিরো পয়েন্টসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরাও ঢাকামুখী সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন।

এদিন অবরোধ কর্মসূচি শেষে দাবি আদায়ে সরকারকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আন্দোলন সফল করতে এদিন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ২৩ জনকে সমন্বয়ক এবং ৪২ জনকে সহ সমন্বয়ক করা হয়।

এছাড়াও কোটা বাতিলে এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অনলাইন অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে। পরের দিন বুধবার (১০ জুলাই) সারাদেশে সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ব্লকেড কর্মসূচি থাকবে না। ছাত্র ধর্মঘট এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। এজন্য মঙ্গলবার সারাদেশে অনলআইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করব। বুধবার সারাদেশে সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।’

আরো পড়ুন:

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৮ জুলাই রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এদিন বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কিছু অংশ কারওয়ান বাজার মোড়ে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। শাহবাগ থেকে কিছু শিক্ষার্থী গিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কাওরান বাজার ও মিন্টো রোডের মোড় অবরোধ করেন।

একই সময় সায়েন্সল্যাব অবরোধ করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন ইডেন কলেজ ও হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর চানখাঁরপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠার রাস্তা অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা।

রাত সাড়ে ৮টায় কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ছাত্রদের যদি কোনো ক্ষতি হয়, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। আমরা থাকব রাস্তায় আর আপনারা থাকবেন এসি রুমে। তা হবে না। আপনারা যদি অতি সত্বর আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেন তাহলে বুঝব আমাদের পালস বুঝতে পারেননি।’

গাবতলী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে ঢাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেলে চারটার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ায় ডিজিএফআই পরবর্তী কর্মসূচি ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ রাখতে সমন্বয়কদের চাপ দিতে থাকে। সোমবার ব্লকেড শুরু হওয়ার আগেই নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও আবু বাকেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ছিল বিকেলে ৩ টা থেকে। সমন্বয়করা যাতে ঠিক সময়ে কর্মসূচিতে উপস্থিত হতে না পারে, সেই জন্যই আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করতে থাকেন ডিজিএফআই’র কর্মকর্তা।

এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে বাংলাবাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ শেষে বংশালে এসে পৌঁছালে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দেয়। পরে ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের সামনে জিপিও মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেন তারা। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেরচন্ডী সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে অবস্থান নেন।

এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে সড়কের উভয় লেনে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুন:

এছাড়াও টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন আটকে আন্দোলন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর দেড়টা থেকে সোয়া ৩টা পর্যন্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড়-সংলগ্ন এলাকায় জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রেললাইন অবরোধ করেন তারা।

এদিন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মহানগরীর মডার্ন মোড়ে অবরোধ করেন। এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৩টায় জেলার সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড মোড় অবরোধ করেন।

ইএ