১৬ জুলাই। স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে চট্টগ্রামের মুরাদপুর আর বহদ্দারহাটে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সামনে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে যায় হাজারও ছাত্র-জনতা। এক পর্যায়ে ভারি অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কাঁঘে কাঁধ মিলিয়ে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রণাঙ্গনে লড়ে যায় ছাত্র, যুবক, রিকশাচালক, কাঠ মিস্ত্রী সহ সর্বস্তরের মানুষ।
বিকেল চারটার দিকে মুরাদপুরে গুলিবিদ্ধ হন দেশের দ্বিতীয় শহীদ চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম। তার কিছুক্ষণ পরেই প্রাণ হারান এম ই এস কলেজে শিবির নেতা ফায়সাল হোসেন শান্ত, কাঠমিস্ত্রি ওমর ফারুক। তাই সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম আজ শ্রদ্ধায় নত, স্মরণে অশ্রুসিক্ত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক সিয়াম এলাহি বলেন, ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ মারা যান, ঠিক একই সময়ে চট্টগ্রামে আমরাও যখন কর্মসূচী দিয়েছিলাম ষোলশহরে তখন ছাত্রলীগ আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের ওয়াসিম, শান্ত ও ওমর ফারুক শহিদ হন।’
মহান এই শহীদদের আত্মদান যাতে বিফলে না যায় সেজন্য নগরের মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে নির্মিত হচ্ছে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতিবাদ এবং ন্যায়ের সংগ্রামকে অমর করে রাখতে এই স্তম্ভটির উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা। সঙ্গে ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এসময় এসময় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন স্বজনরা। অভিযোগ করেন, জুলাই শহীদ ভাতা ও আসামিদের গ্রেপ্তারে ধীরগতি নিয়ে।
শহিদ শহিদুলের স্ত্রী হোছনে আরা বেগম বলেন, ‘ছেলে মেয়েরা বাবা হারিয়েছে, আমি বিধবা হয়েছি। অথচ আজকে এক বছর হয়ে গেছে আমরা কোনো বিচার পাইনি।’
শহিদ ওমর ফারুকের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়ালেখার সব দায়িত্ব বাবা নিতো। এখন আর তাদের বাবা নেই। সরকারের যা দেয়ার কথা ছিলো, তা থেকেও আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমরা চাইনা কোনো শহিদ পরিবার যেন মানবেতর জীবনযাপন করে। তাদের ভাতা এবং পুনর্বাসন দিয়ে তাদের যেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেয়া হয়।’
এর আগে, সকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটে যান শহীদ ওয়াসিমের বাড়িতে। জিয়ারত করেন তার কবর, শোক ও সান্ত্বনায় সামিল হন স্বজনদের সাথে।