উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ট্র্যাজেডির তৃতীয় দিনেও ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও হতাহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশের।
অভিভাবকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের যে বাচ্চারা নিখোঁজ, কেকটা বাবা-মায়ের যে কী অবস্থা সেটা বাবা-মায়েরাই বুঝতেছে যে বাচ্চাগুলো পাওয়া যাচ্ছে না।’
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘হয়তো ডিএনএ টেস্ট করলে খবর পাওয়া যেতেও পারে যে কোনো শিক্ষার্থী আছে কি না। এমন তো না যে কেউ প্রমাণ লোপাট করে দেবে, সেটা তো এখানে আর হবে না, তাই না?’
স্কুলের প্রধান ফটকের সামনে বিভিন্ন প্রান্তের উৎসুক জনতা অভাব নেই। তাদের মুখে ঘটনার নানান বয়ান। বিশেষ করে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে একেকজন দিচ্ছেন একেক তথ্য।
দুপুরের দিকে স্কুলের বাইরে আসেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষক। একজন জানালেন, সেদিন স্কুল ছুটি হয়েছিলো স্বাভাবিক নিয়মে দুপুর ১টায়। বিমান বিধ্বস্তের সময় শ্রেণি কার্যক্রম চলছিলো না।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ছুটি কিন্তু ওইদিন ১টায় হয়েছিল। তারপর বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে সম্ভবত ১টা ১২ মিনিটে। ছুটি হওয়ার পর কিছু বাচ্চা ওয়েটিংয়ে ছিল অভিভাবকের জন্য। কিছু বাচ্চা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে চলে গেছে। এজন্য আমরা হতাহতের খবরটা সঠিক বলতে পারছি না।’
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘স্কাই’ শাখা। সেখানে ঠিক কতজন শিক্ষার্থী ছিলেন তার সঠিক হিসাব দিতে না পারলেও সংখ্যাটা খুব একটা বেশি নয় বলেই স্কুলের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে । স্কুল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি তিনদিনের মধ্যে জানাবে প্রকৃত সংখ্যা।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন বলতে পারছি না, এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ছয় সদস্য বিশিষ্ট। তদন্ত কমিটির যে রিপোর্ট আসবে সেটা আপনারা জানতে পারবেন।’
আপাতত আগামী রোববার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত স্কুলের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ। স্কুল খোলার বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার থেকে ক্লাস শুরু হবে কি না, এটা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রথম ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের সব শ্রেণির ক্লাস, পরীক্ষা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে।’
এদিকে মাইলস্টোনের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গুজব যাচাইয়ে চাইলে গণমাধ্যম তদন্ত করতে পারবে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে। সিআইডি এরইমধ্যে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে। পাঁচটি পরিবার ডিএনএ দিয়েছে।
সিআইডির প্রধান ডিএনএ বিশ্লেষক আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ পরিবারের ১১ জন আমাদের রেফারেন্স ব্লাড দিয়েছে। আর সিএমএইচ থেকে মোট ১টি নমুনা সংগ্রহ করেছি। সব প্রক্রিয়াধীন আছে, প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে যে কতগুলো মরদেহ ওখানে শনাক্ত করার কাজ চলছে।’
এই ঘটনায় বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট সেফটি ও রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আহসান হাবিবকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।