অপুকে গুম করে স্টেটমেন্ট আদায় করা হলে, সেটি অত্যন্ত শঙ্কাজনক: উপদেষ্টা আসিফ

কথা বলছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
কথা বলছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ | ছবি: এখন টিভি
3

ঢাকায় সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুর স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম এসেছে। গতকাল (বুধবার, ১৩ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

আজ (বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় এ নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়।’ তবে অভিযুক্ত অপুর স্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, অপুকে গুম করে জোরপূর্বক স্টেটমেন্ট আদায়ের অভিযোগ করা হয়েছে, যা সত্য হলে অত্যন্ত শঙ্কাজনক।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘আসলে প্রথমত হচ্ছে, এই বিষয়টা যেহেতু তদন্তাধীন, এটা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। তারপরও যেহেতু নাম স্পেসিফিকলি সেখানে এসেছে, নামটা আসার পর আমি একপ্রকার অবাকই হই। কারণ অপুকে আমি চিনতাম যখন ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিলাম। ২০২২ সালে, তখন আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। সেও ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিল। সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বোধহয় ছিল। তখন চিনতাম। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে তার সঙ্গে আমার কখনও কথা বা দেখা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের একটা দাবি আসার পরে আমরা আরেক জায়গা থেকে জানতে পারলাম, কিছুক্ষণ আগেও আমি কেবিনেট থেকে বের হয়ে দেখলাম যে একজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার স্ত্রী পরিচয়ে। আমি খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছি, আসলে কী ঘটনা। তিনি সেখানে দাবি করেছেন, অপুকে গুম করে স্টেটমেন্ট আদায় করা হয়েছে জোরপূর্বক। যদি এরকম কিছু হয়েই থাকে, সেটা আসলেই অত্যন্ত শঙ্কাজনক।’

আরও পড়ুন

উপদেষ্টা বলেন, ‘৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আমরা যদি আবারও আগের মতো পরিস্থিতিতে ফিরে যাই; এটা আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুম হতো, আপনারা জানেন, আমাদের এখানে আয়নাঘর ছিল—যেগুলো ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে এখন অকার্যকর। আমরা কী আবার সেই প্রেক্ষাপটে যাচ্ছি কি না, এটাও একটা শঙ্কার বিষয়।’

সিসিটিভি ফুটেজে দাবি করা হয়, আপনি বাইকে চড়ে গিয়েছিলেন? এমন প্রশ্নে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যেই রাতে, যখন আমার কাজ শেষ হয়, কখনও কখনও ভোর হয়ে যায়। ওই সময় বাসায় আসলে খাওয়া-দাওয়ার মতো কিছু থাকে না। মাঝেমধ্যে বেশিরভাগ সময়ই ৩০০ ফিটের নীলা মার্কেট বলে একটা জায়গা আছে, সেখানে যাই। ওখানে হাঁসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায়। সেখানে হয়তো যাই ৪-৫ জন মিলে। আবার মাঝেমধ্যে যদি বেশি ভোর হয়ে যায়, তখন সেটাও বন্ধ থাকে। তখন ওইদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়। ওইদিন আমি গিয়েছিলাম কিনা, সেটা আমার…’ (থামিয়ে অন্য প্রশ্ন)।

সিসিটিভি ফুটেজে আপনি কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন সিসিটিভি ফুটেজে হেলমেট পরা যে কাউকে আমাকে বলে দাবি করা হয়, এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য! এ বিষয়ে বেশি কিছু আর বলতে চাই না, কারণ এটা তদন্তাধীন বিষয়। তারপরও অনেক কিছু বললাম, যেহেতু আমার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমার মনে হয়, এখনও কেউ এরকম প্রমাণ দিতে পারেনি যে আমার সম্পৃক্ততা আছে। বরং, আরও যার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে—একজন রাজনৈতিক নেতার বাসায় জোরপূর্বক নেয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ এসেছে, সেটাও অত্যন্ত গুরুতর একটি অভিযোগ। এবং সেটা পরিবারের দিক থেকে এসেছে, যা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্যও এখন পর্যন্ত মনে হয়েছে। এটার সঙ্গে আমার যে সংশ্লিষ্টতা বলা হচ্ছে, সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

আরও পড়ুন

রাজনীতিতে আসা ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তফসিলের আগের যে বক্তব্যটা আমি দিয়েছি, সেটা শুধু আমার কথা বলিনি। আমি বলেছি, যাদেরই রাজনীতি করার ইচ্ছে আছে, সবাই শুধু পরিচিতি বেশি হওয়ার কারণে আমার বা ছাত্র উপদেষ্টাদের কথা বলে থাকেন। কিন্তু এখানে আরও উপদেষ্টারা আছেন, যাদের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিচয় আছে। এখনও হয়তো আছে এবং সামনেও রাজনীতি করবেন, নির্বাচনও করবেন। সরকারের বিভিন্ন জায়গায় হয়তো আরও এরকম আছেন। আমি মনে করি, সবারই তফসিলের আগে পদত্যাগ করা উচিত—একটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু, কোনপ্রকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের জন্য। আমি নির্বাচন করবো কি না, এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’

এনএইচ