গাজীপুরে বনভূমির দখলবাজিতে অকার্যকর বন অধিদপ্তরের অভিযান

গাজীপুরের বনভূমি
গাজীপুরের বনভূমি | ছবি: এখন টিভি
0

অবৈধ দখলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে গাজীপুর জেলার সংরক্ষিত বনভূমি। কল-কারখানা, রিসোর্ট, কটেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে বেদখল ছয় হাজার একরের বেশি। এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলছেন পরিবেশবিদরা। বন অধিদপ্তর বলছে, বছরে কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও প্রভাবশালীদের কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না দখল। তবে স্থানীয়রা জানান, শস্যের ভেতরেই রয়েছে ভূত।

দেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ জেলা গাজীপুর। যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে আট হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। শিল্পঘন এ এলাকায় রয়েছে সংরক্ষিত বনভূমিও।

দেশের মূল বনের আয়তন ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার একরের বেশি। এর মধ্যে গাজীপুর জেলায় বনভূমি আছে ৬৫ হাজার একরের বেশি জায়গাজুড়ে।

পরিবেশগত সমীক্ষা বলছে, বিগত সময়ে জেলায় বনভূমির পরিমাণ কমেছে অন্তত ১১-১৪ শতাংশ। অথচ এ জেলাতেই অবস্থিত অক্সিজেনের ভান্ডার খ্যাত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন। তারপরও কেন কমছে বনভূমি ?

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘ফ্যাক্টরি মালিকরা এসে যখন জমি কিনেছে তখন বৈধ জায়গা কিনছে পাঁচ বিঘা এর সঙ্গে দুই বিঘা খাস জমি কিনে দখল করে নিয়েছে। সেখানে কারখানা করে চালাচ্ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪ হাজার ৫৫৫ জন ব্যক্তির নাম কোনো না কোনোভাবে বন জবরদখলকারীর তালিকায় রয়েছে, যারা বনবিভাগের জমি দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলছেন।

বন বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন নথি ঘেঁটে দেখা যায়, বন বিভাগের প্রায় ৬৫ একর জমি জবরদখল করে ৩৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান কল কারখানা নির্মাণ করেছে। রিসোর্ট,কটেজ,কৃষি ফার্মের নামে ১৩৫৮টি ছোট প্রতিষ্ঠান দখল নিয়েছে ৭৬৫ একর জমি। ব্যক্তি পর্যায়ের ঘর বাড়ি জবরদখলকারীর সংখ্যাও কম নয়। ১০ হাজার ২০০ বাসিন্দা দখলে রেখেছেন ৪ হাজার ৬২৬ একরের বেশি বনের জায়গা। আর বাগান, কৃষি জমির নামে ১০৩ ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন ১০৭ একর ভূমি।

আরও পড়ুন:

নথিপত্রের এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেল অভিযোগ ওঠা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে। এ নিয়ে সবাই মুখ না খুললেও, কয়েকজন স্বীকার করেছেন জমি দখলের বিষয়টি। তবে কিছু জমি তাদের কেনা বলে দাবি করেন তারা।

এদিকে প্রধান বন সংরক্ষক জানান, শত বাঁধার পরেও বেদখল হওয়া বনভূমি পুনরুদ্ধারে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তারা। যৌথ বাহিনীর সমন্বয়েও চলছে কাজ।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘গাজীপুরের বনভূমি জবরদখল হচ্ছে এবং জবরদখল রক্ষা করার জন্যও কিন্তু আমাদের বন কর্মী যারা আছে তারা কিন্তু অ্যাসহোল্ট হচ্ছে, তারা কিন্তু আহত হচ্ছে, তারা কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, যৌথ বাহিনীর সহায়তায় আমরা কিন্তু বেশ বড় এলাকার বনভূমি গাজীপুর থেকে পুনঃউদ্ধার করে পুনঃবনায়ন করেছি।’

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, দখল রোধে পুরাতন বন আইনের সংস্কার করা জরুরি।

বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, রিসোর্ট, ফার্ম, বাসা-বাড়ি, বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে প্রায় সাত হাজার ৪৫০ একর বনভূমি এ পর্যন্ত বেদখল হয়ে গেছে। আইন সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা চাই দ্রুত এ অতি পুরাতন বন আইনটা হালনাগাদ করে যুগোপযোগী করা উচিত।’

গাজীপুরের বিস্তীর্ণ বনভূমি, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ঢাকা বিভাগের আওতায় ছয়টি রেঞ্জ অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন ২৭টি বিট অফিস রয়েছে।

এসএস