জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের অধ্যাদেশ নিয়ে আসিফ নজরুল জানান, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবের বিষয়ে দেশের মানুষের মতামত বা সম্মতি জানার জন্য গণভোট অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যে গণভোটটি হবে সে গণভোটটা কীভাবে গ্রহণ করা হবে সে প্রক্রিয়াটা গণভোট অধ্যাদেশে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভোট অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:
কী আছে গণভোট অধ্যাদেশে:
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, গণভোটে নিম্নরূপ একটি প্রশ্ন উপস্থাপন করা হবে- আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?; (হ্যাঁ/না):
(ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
(খ) আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
(গ) সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছে- সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।
আইন উপদেষ্টা জানান, এ আইন প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া গেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল, কয়েকজন উপদেষ্টা ও আইন মন্ত্রণালয়ও প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন।
আসিফ নজরুল জানান, গণভোটে থাকবে মাত্র একটি প্রশ্ন—ভোটাররা জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এবং সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার-সংক্রান্ত চারটি প্রস্তাবের প্রতি সম্মতি জানান কি না। ব্যালটে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ দুটি ঘর থাকবে; সম্মত হলে ‘হ্যাঁ’, না হলে ‘না’-তে সিল দিতে হবে। চারটি প্রস্তাব হলো—
• জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন;
• আগামী জাতীয় সংসদকে দুই কক্ষবিশিষ্ট করা এবং প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠন;
• জুলাই সনদের ৩০টি সংস্কার—নারীর প্রতিনিধিত্ব, বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সভাপতিত্ব, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ইত্যাদি—এসব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর বাধ্যবাধকতা;
আরও পড়ুন:
• জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন।
তিনি বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী প্রতিটি দলই ৩০টি প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে; এনসিপিও একই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। এজন্যই বলা হচ্ছে, এ ৩০টি প্রস্তাবে ‘ঐকমত্য’ হয়েছে। অধ্যাদেশের অ্যাপেন্ডিক্সে এ ৩০টি প্রস্তাব সংযুক্ত থাকবে, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ জানতে পারে গণভোটে কোন বিষয়ে মতামত চাওয়া হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা আরও জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেসব কেন্দ্রে হবে, সেই কেন্দ্রগুলোতেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে; একই ভোটার তালিকাই ব্যবহার করা হবে।
গণভোটের ব্যালট সংসদ নির্বাচনের ব্যালট থেকে আলাদা রঙের হবে, যাতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি না হয়। নির্বাচনের জন্য নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তারাই গণভোটে দায়িত্ব পালন করবেন।





